আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের কিছু মানুষ, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। আর কিছু আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই তথাকথিত বুদ্ধিবীজীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছেন। অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান, সবই এখন এক হয়ে গেছে। এই দুই মেরু এক হয়েও, সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কি আমাদের?
তিনি বলেছেন, আমি জবাব চাই। মানবাধিকার সংস্থা, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট, যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেয়। যারা আমাদের ওপর খবরদারি করে। আমি জবাব চাই। আমার বাঙালি কেন মারা যাবে? ওরকম ছোট্ট একটা শিশু তার মায়ের কোল নিয়ে নিয়ে গুলি করা। প্রফেসরদের ওপর জুলুম করা।
মঙ্গলবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের চেহারা আয়নায় না দেখে, মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশকে ছবক দেয়। মার্কিন কোনো পুলিশের গায়ে কোনো রাজনৈতিক দল হাত তুললে, কী করতো সেখানকার পুলিশ? কদিন আগে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কি জুলুমটাই না করলো আমেরিকার পুলিশ। এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জবাব কী?
সম্প্রদি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশ করা ‘২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালেও ‘বড় কোনো পরিবর্তন’ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, গত বছর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্বিচারে বেআইনি হত্যার ঘটনা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অসম্মানজনক আচরণ, কারাগারের কঠিন ও জীবনের জন্য হুমকির পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার-আটক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় গুরুতর সমস্যা, অন্য দেশে থাকা ব্যক্তিদের ওপর দমন-পীড়নের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের জন্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ব্যবহার করেছে’ বলেও মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
এদিকে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলো শহরে দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কুমিল্লার বাবুল উদ্দিন এবং সিলেটের ইউসুফ মিয়া।
অন্যদিকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র উত্তাল হয়ে রয়েছে। দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে ব্যাপক ধরপাকড় চারিয়েছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে। আটক হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ।
এসব ঘটনার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, যারা একেবারেই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া-এদের কিছু বক্তব্য; আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাচ্ছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসে লুটপাট করতে পারছে না বলেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেমেছে বিএনপি। বিএনপি এমন একটি দল, যাদের কোনো মাথামুণ্ডু নেই। তারা শুধু পারে অনলাইনে নির্দেশনা দিতে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে অপকর্ম করেছে, তা মানুষের ভুলে যাওয়া উচিত না।
ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসা দলের কাছে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা কেন বুঝছে না দেশবাসী এই নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে খুশি। জনগণের আস্থা আওয়ামী লীগ পেয়েছে, কারণ মানুষ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ তাদের উপকার করে।
বৈশ্বিক নানা সংকটেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে যাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তার সরকার।
জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের মানুষের দিন বদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়া যাবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর না পেরোতেই দেড় হাজার কোটি টাকা উপার্জন হয়েছে দেশের। এটাই তো প্রাপ্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার অতিমারি। এরপর আসে ইউক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। এসব সমস্যার কারণেই কিন্তু আমরা নয়, সারা পৃথিবী, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৮ সালর নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা একধাপ ওপরে তুলবো। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই, দিন বদলের সনদ আমরা ঘোষণা দেই। আজ দিন বদল ঘটেছে।
তিনি বলেন, সবসময় আমরা লক্ষ্য রেখেছি তৃণমূল মানুষ, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। আজ কেউ বলতে পারছেন না যে গ্রামে দারিদ্র্য আছে। এখন বলে শহরে দারিদ্র্য। এখন অদ্ভুত এক হিসাব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ একসময় গ্রামের মানুষ একবেলা ভাত খেতে পেতো না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। রোগের চিকিৎসা পেতো না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিলো। আমাদের উন্নয়নে তৃণমূল মানুষের দিকে লক্ষ রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলা-উপজেলা গৃহহীন, ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা দিয়েছি। অল্প কিছু বাকি আছে, সেগুলোও শিগগিরই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনো মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না।