টপ-অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ পেল বেশ ভালো সংগ্রহ। জুটি গড়লেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি অনিক।হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। রান তাড়ায় নেমে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের হাল থাকে আগের দুই ম্যাচের মতোই। শেষদিকে ফারাজ আকরাম, জনাথন ক্যাম্পবেলদের লড়াইয়ে ম্যাচ জমে গেলেও জিততে পারেনি সফরকারীরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয়টিতে জিম্বাবুয়েকে ৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান করে বাংলাদেশ। ওই রান তাড়া করতে নেমে ১৫৬ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। এদিন টস জেতেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। তিনি বেছে নেন আগে বল করার। তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের জুটিতে প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান আসে বাংলাদেশের।
কিন্তু চতুর্থ ওভারে গিয়ে লিটন দাস রীতিমতো পাগলামি শুরু করেন। ব্লেসিং মুজারাবানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে স্কুপ করতে গিয়েও সেটি ঠিকঠাক করতে পারেননি। টানা তৃতীয় বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। ১৫ বল খেলে ২ চারে কেবল ১২ রান করেন তিনি।
পরের ওভারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়ে যান। নিজের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় ও রাজার করা প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করে চার হাঁকান শান্ত। দুই বল পর স্ট্রাইকে ফিরে হয়ে যান বোল্ড। রাজার আর্ম বলের লাইন মিস করেন ৪ বলে ৬ রান করা শান্ত।
এরপর উইকেটে এসে তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গী হন তাওহীদ হৃদয়। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪২ রান। দুজনের ২৬ বলে ৩১ রানের জুটিতে আশা খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই জুটি ভেঙে যায় ফারাজ আকরামের বলে।
তার বলে এগিয়ে এসে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি তানজিদ। মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ২১ রান করে। এই জুটি ভেঙে যাওয়ার পর হৃদয়ের সঙ্গী হয়ে দলকে টেনে নেন জাকের আলি অনিক। শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতে খেললেও আস্তে আস্তে হাত খোলেন জাকের ও হৃদয়।
৩৪ বলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পান তাওহীদ হৃদয়। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্লেসিং মুজারাবানিকে স্কুপ করে চার হাঁকান হৃদয়। কিন্তু পরের বলেই তার ইয়র্কারে হয়ে যান বোল্ড। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ বলে ৫৭ রান করেন হৃদয়। জাকেরের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৫৮ বলে ৮৭ রানের।
হৃদয়ের এক বল পর মুজারাবানির আরেক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান জাকেরও। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। শেষ ওভারে ১৬ রান নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও রিশাদ হোসেন। রিয়াদ ৯ ও রিশাদ ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন মুজারাবানি। একটি করে উইকেট পান ফারাজ আকরাম ও সিকান্দার রাজা।
রান তাড়ায় নেমেও জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের চেহারায় খুব একটা বদল আসেনি। আগের দু ম্যাচে আগে ব্যাট করে রান করতে পারেননি দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা, পারেননি এদিনও। পাওয়ার প্লের ভেতর ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে।
শুরুটা করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার বলে পুল করতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি জয়লর্ড গাম্বি। ৮ বলে ৯ রান করে থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন গাম্বি। এরপর ৮ বলে ৫ রান করা ব্রায়ান বেনেটের ক্যাচ নিজের বলে নিজেই নেন তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেটটি আবার তুলে নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৭ বলে ৭ রান করা ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করেন তিনি। তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর চাপে পড়া দলকে আরও একবার টেনে তুলতে ব্যর্থ হন জিম্বাবুয়ের জন্য লম্বা সময় ধরে ভরসা হওয়া অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। রিশাদ হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৫ বলে কেবল ১ রান করেন তিনি।
একপ্রান্তে উইকেট যাওয়ার মিছিলে আরেক প্রান্ত আগলে ছিলেন তাদিওয়ানাসে মারুমি। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ৩১ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বলে দারুণ এক ক্যাচ নেন সাইফউদ্দিন।
আগের ম্যাচের অভিষিক্ত জনাথন ক্যাম্পবেল এ ম্যাচেও ঝড়ো শুরু করেন। ২ চার ও সমান ছক্কায় ১০ বলে ২১ রান করেন তিনি। টানা তৃতীয় বলে তানভীর ইসলামকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে বাউন্ডারির কাছে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
ক্যাম্পবেলের বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ের হয়ে শেষ লড়াইটুকু লড়েন ফারাজ আকরাম। বাংলাদেশের মনে ভয়ও ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার সঙ্গে নবম উইকেট জুটিতে পঞ্চাশের বেশি রানের জুটি গড়েন আকরাম ও ওয়েলিংটন। শেষ ছয় ওভারে ৭৫ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের।
সেখান থেকে শেষ ওভারে ২১ রানের সমীকরণে নিয়ে আসেন তারা। যদিও শেষ ওভারের প্রথম বলেই ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ইয়র্কারে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। পরে টানা দুই বলে বাউন্ডারি হজম করার পর স্লোয়ার বাউন্সারে ডট দেন তিনি।