ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। উজানের পানি ত্রিপুরার বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু হু করে ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারী বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে বানের পানি ঢুকতে থাকায় ফেনী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
ত্রিপুরাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বোরক টাইমস ও ত্রিপুরা টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার প্রায় ৩১ বছর পর ত্রিপুরা কর্তৃপক্ষ ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে। সবশেষ ১৯৯৩ সালে এই বাঁধের স্লুইস গেট খোলা হয়েছিলো।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বাঁধ ভেঙে গেলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো, সেই আশঙ্কায়ই স্লুইস গেট আগেভাগেই খুলে দেয়া হয়েছে।
একই কথা বলছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে গোমতী জেলায় রাজ্যের একমাত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডুম্বুর জলাধারে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পানি জমা হয়ে পড়েছে, তাই যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে; এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকায় আগাম ঘোষণা দিয়ে জলাধার কর্তৃপক্ষ স্লুইস গেট খুলে বাড়তি পানি ছেড়ে দিয়েছে।
এদিকে স্লুইস গেট খুলে দেয়ার ফলে ত্রিপুরার গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষি জমি ভেসে গেছে। বিভিন্ন নদ-নদী বেয়ে সেই পানি ছুটে আসছে ভাটির দিকে।
ত্রিপুরার হাওড়া, ধলাই, মুহুরি ও খোয়াই নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সেই পানি বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা দিয়ে ঢুকছে এবং নিম্নাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি এখন পানির নিচে। সদর উপজেলা, সোনাগাজীর অনেক গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তায় এরইমধ্যে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মনিটরিং সেল চালু করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে অধিদপ্তরে স্থাপিত এই মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বুধবার বিকেল থেকে।
ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশের বন্যা কবলিত এলাকার উদ্ধারকাজ বিষয়ে যে কোনো সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন নম্বর ১০২ এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিয়মিত ফোন নম্বর ০২২২৩৩৫৫৫৫৫ চালু থাকবে।
পাশাপাশি মনিটরিং সেলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ০১৭১৩০৩৮১৮১ মোবাইল নম্বরে ফোন করা যাবে। পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেও ফায়ার সার্ভিসের এ সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করা যাবে।