চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে যে কেউ ঢুকতে পারছেন যে কোনো মন্ত্রণালয়ে। আর এই বাণিজ্যে জড়িত খোদ পুলিশ সদস্যরাই। শুধু তাই নয়, নষ্ট প্রতিটি গেটের লাগেজ স্ক্যানার, অকেজো মেটাল ডিটেক্টরও। এমনকি কাজ করে না গাড়ি স্ক্যানিংয়ের এক্সরে মেশিনও।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সচিবালয়ে ঢোকার প্রতিটি গেটে আছে পুলিশি নিরাপত্তা। আছে সিসিটিভি ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর, লাগেজ স্ক্যানারসহ নানা ধরনের যন্ত্র। এসব দেখে মনে হতে পারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কড়া। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় একটি অনলাইন কোম্পানির এক প্রতিনিধির সঙ্গে। যিনি মাহফুজ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে পাস নিয়ে নিয়মিত আসেন সচিবালয়ে। এজন্য প্রতিবার গুণতে হয় পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকা।
ওই ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশ কর্মকর্তার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সচিবালয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয় পরিচয় গোপন করে। এজন্য দেখানো হয় আর্থিক প্রলোভন। তাতে রাজিও হন মাহফুজ।
মন্ত্রণালয়ে কাজের প্রমাণ হিসেবে, প্রয়োজনীয় নথি পাঠানোর অনুরোধ করেন তিনি। এরপর তা তৈরি করে হোয়াটসআপে দেয়া হলে তিনি আশ্বাস দেন, পরদিন ব্যবস্থা করে দেয়ার।
এরপর সচিবালয়ে মাহফুজের খোঁজে নামে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। এক পুলিশ সদস্য জানান, মাহফুজ এখন আর সচিবালয়ে কর্তব্যরত নেই। অর্থাৎ বদলি হলেও, শক্ত তার সিন্ডিকেট।
আবার যোগাযোগ করা হলে মাহফুজ জানান, উত্তরায় বদলি হয়েছেন চার মাস আগে। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে সচিবালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের উপকমিশনার জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, এমন অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, প্রতিদিন দর্শনার্থী পাস নিয়ে সচিবালয়ে ঢোকেন প্রায় হাজার মানুষ। অস্থায়ী পাস নিয়ে ঢোকেন আরো কয়েক হাজার।
এক কর্মকর্তা জানান, আগে ১৩০০ কর্মকর্তার দর্শনার্থী পাস দেয়ার এখতিয়ার থাকলে বর্তমানে তা নেমেছে ৯০০ -তে।
এরপর খুঁজে দেখে নিরাপত্তা চেকিংয়ের জন্য বসানো যন্ত্রপাতির অবস্থা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাঁচ নম্বর গেটের বিশাল একটি লাগেজ স্ক্যানার পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে ধুলো জমেছে। মেটাল ডিটেক্টরটিও অচল।
সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান জায়গা দুই নম্বর গেট। মূল গেট দিয়ে গাড়িতে চড়ে প্রবেশ করেন স্থায়ী ও অস্থায়ী পাসধারীরা। আর দর্শনার্থীরা প্রবেশ করেন সংলগ্ন ভবনের নিরাপত্তা পেরিয়ে। সেখানে আছে দুটো নিরাপত্তা কক্ষ। প্রথমটিতে আছে একটি ব্যাগেজ স্ক্যানার। যা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। ধুলো ময়লার স্তর জমেছে। মেটাল ডিটেক্টরটির অবস্থাও করুন।
এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় নিরাপত্তা রুমেও আছে একটি বিশাল ব্যাগেজ স্ক্যানার। কিন্তু সেটিও অকেজো।
একেবারে শেষ অংশে দর্শনার্থীদের পাস পরীক্ষা করা হয়। ক্যামেরায় ভিডিও করা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান সেখানে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা।
এরপর প্রতিবেদক গাড়ি চেকিং ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। সেখানে বিশাল একটি এক্সরে মেশিন বসানো থাকলেও, অস্ত্র বা ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য আছে কিনা তা মনিটরে ধরা পড়ে না। আবার একসঙ্গে একাধিক গাড়ি মেশিনে উঠলে স্ক্যানার কাজ করে না। বেসরকারি কোম্পানি ট্রেসার ইলেকট্রোকম দিচ্ছে এই সেবা।
এসব বিষয়ে সচিবালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একাত্তর। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও সংশ্লিষ্ট শাখার উপসচিব আবুল কালাম জানান, মেশিনপত্র অকেজো থাকার বিষয়ে তারা জানেন।














The Custom Facebook Feed plugin