জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে ইশিকাওয়া প্রদেশের নোতো উপদ্বীপের কাছে সাত দশমিক ছয় মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। জাপানের আবহাওয়া দপ্তর (জেএমএ) এই কম্পনকে দেশের সর্বোচ্চ স্তর শিন্দো-৭ হিসেবে রেকর্ড করেছে। এটি ২০১৮ সালের পর জাপানে প্রথম শিন্দো-৭ ভূমিকম্প।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) বরাত দিয়ে ফক্সওয়েদার ডট কম জানিয়েছে, কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল সুজু শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে, মাত্র ১০-১৬ কিলোমিটার গভীরে। এ কারণে পৃষ্ঠে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের চার মিনিট আগে ৫.৮ এবং নয় মিনিট পর ৬.২ মাত্রার দুটি বড় আফটারশক রেকর্ড করা হয়।
ভূমিকম্পের পরপরই জাপানের পশ্চিম উপকূলের জন্য প্রথমবারের মতো ২০১১ সালের পর বড়ো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ওয়াজিমা বন্দরে ১.২ মিটারের বেশি উঁচু সুনামির ঢেউ আঘাত হানে। নিইগাতা, তোয়ামা ও হিয়োগো প্রদেশেও সুনামির ঢেউ দেখা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলেও ছোট ঢেউ পৌঁছায়। প্রথমে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হলেও পরে তা কমে আসে।
সর্বশেষ হিসাবে এই ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২২২ জন নিহত এবং এখনো ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইশিকাওয়া প্রদেশ। এর মধ্যে সুজু শহরে ৯৯ জন এবং ওয়াজিমা শহরে ৮৮ জন মারা গেছেন।
হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। ওয়াজিমায় একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শত শত ভূমিধসে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটে। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। প্রায় এক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছেন। জাপানের স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাজারো সদস্য উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তুষারপাত ও ঠান্ডার মধ্যেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। কাছাকাছি শিকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো বড়ো ক্ষতি না হলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকারি হিসাবে এই ভূমিকম্পে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭.৪ থেকে ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
জাপানের রিং অব ফায়ারে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকে। তবে এবারের এই ঘটনা ২০২৪ সালের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উদ্ধার ও পুনর্গঠন কাজ এখনো চলছে। জাপান সরকার জানিয়েছে, দুর্গত এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য বড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।



















