গাজায় উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থায় রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ এলাকায় বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। এই হামলার পেছনে হামাসের একটি হামলাকে দায়ি করা হচ্ছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে হামাস সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীরা রাফাহতে ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলায় অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল, স্নাইপার গুলি, মর্টার এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহৃত হয়। ইসরাইলি সেনারা সেখানে যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে সন্ত্রাসী অবকাঠামো, যেমন টানেল এবং সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করছিলো। হামলায় কোনো ইসরায়েলি সেনা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এর জবাবে ইসরাইলি বাহিনী রাফাহতে ২০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল হামাসের কমান্ড সেন্টার, অস্ত্রের গুদাম এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী অবকাঠামো। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও হামলার খবর পাওয়া গেছে, যদিও আইডিএফ এটি নিশ্চিত করেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজকের হামলায় কমপক্ষে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইসরাইল ৪৭ বার তা লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে ৩৮ জন নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছে।
এদিকে খান ইউনিস এবং রাফাহের হাসপাতালগুলো আহতদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে। সাহায্য সরবরাহের পথও সীমিত হয়ে পড়ায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই ঘটনার পর জরুরি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন। তিনি বলেন, ইসরাইল যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে জবাব দেবে।
অপরদিকে, হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডস দাবি করেছে, রাফাহতে কোনো হামলার বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য নেই এবং তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসের হামলাকে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজাকে ‘নিরস্ত্রীকরণ’ করার ওপর জোর দিয়েছেন।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার খান ইউনিসের ধ্বংসের ছবি শেয়ার করে গাজার মানবিক চাহিদার কথা তুলে ধরেছেন। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৬৮ হাজার ১৭২ জন ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক হাজার ৯৮৩ জন ইসরাইলি রয়েছেন। গাজা সিটি থেকে আট লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৭৮ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই ঘটনা যুদ্ধবিরতিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হামাসের মধ্যে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বা পারস্পরিক অভিযোগ উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।











The Custom Facebook Feed plugin