সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার। তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও আজ শপথ নেবেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে দল ও সরকার পরিচালনায় অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাল ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে টানা চতুর্থ এবং পঞ্চমবারের মতো দলকে জয়ী করে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন তিনি। বিশ্বে কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনন্য নজির ও গৌরবের মুকুটের অধিকারিও হবেন তিনি। নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সাহসী কর্মকাণ্ড দিয়ে আরো আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনা-কে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী। আর ১১ জন পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।

এর আগে গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের অনুমতি চেয়ে দলের পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাষ্ট্রপতি এ সময় তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপ্রধান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ বিজয় জনমতেরই প্রতিফলন। রাষ্ট্রপতি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে, এবং  প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এর আগে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্রপ্রধান ও তাঁর পত্নীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিবসহ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণও  উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সাক্ষাত্। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বশেষ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন।

গত রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে মোট দুজন জয়ী হয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে সংসদের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে। আর ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৯৯৬ সালে। ওই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০১ সালে মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় বিএনপির কাছে। পরে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রায় ২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ নির্বাচনের পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিক অগ্রগতি আর সম্মানের পথটি দিন দিন প্রশস্ত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের উন্নয়নের কাজে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকের। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৩টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং এই আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচএম এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংগঠিত করেন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে এবং রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেছনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ঐতিহাসিক হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে রেখে সহস্র বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!