মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তুরস্কের মত ভূমিকম্পে কী ঘটতে পারে ঢাকায়?

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বাংলাদেশেও তৈরি করেছে শঙ্কা। এরকম শক্তিশালী ভূমিকম্প যদি ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে অনুভূত হয় তাহলে কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে নানা রকম অনুমান-জল্পনাকল্পনা। ভূমিকম্প সহনশীল ভবন কতগুলো আছে, ভূমিকম্পের পর উদ্ধার অভিযান কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা-দক্ষতা কতটুকু এ নিয়ে চলছে আলোচনা।

যদি রিখটার স্কেলে ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় তাহলে রাজধানীর অধিকাংশ ভবন ধসে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া উদ্ধার তৎপরতা চালানোর দক্ষতাও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি বলে অনেকের অভিমত। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্পসহ যেকোনও ধরনের দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার অভিযানে প্রস্তুত তারা।

পূর্বাভাস কি আছে?

২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি সেন্টার পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বাংলাদেশেও। মাটির নিচে ভারতীয়, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলের ওপর বাংলাদেশের অবস্থান। এ কারণেই এই ঝুঁকি।

উল্লেখ্য, মাটির নিচে পাথর ও অন্যান্য খনিজের বিশাল আকৃতির (শত বা হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ) খণ্ডগুলোকে প্লেট বলে। অনমনীয় এই প্লেটগুলো চলমান অবস্থায় থাকে। চলতে চলতে একটির সঙ্গে অন্যটির ঘর্ষণ বা সংঘর্ষের ফলে অনেক সময় ফাটল তৈরি হয়। মাটির নিচের ওই ঘর্ষণ বা ফাটল থেকে ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

২০১৬ সালের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান। এই প্লেট কয়েকশ’ বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করছে এবং গত একশ’ বছরে  বাংলাদেশে বা আশপাশের অঞ্চলে বড় কোনও ভূমিকম্প হয়নি। তাই যেকোনও সময় হতে পারে ভূমিকম্প। যার মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৮-এর কাছাকাছি। ভারত-বার্মা প্লেটের ওপরে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান হওয়ায় সেখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে সেসব এলাকা।

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষকরা বলছেন, কোনও এলাকায় সাধারণত একশ বা দেড়শ’ বছর পর পর ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। সেই হিসাবে যেকোনও সময় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশে হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তারা জানান, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার শঙ্কা সাধারণত থাকে আড়াইশ’ বছর পর পর।

বুয়েটের গবেষকরা জানান, ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সালে পর্যন্ত ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের বিভিন্ন জায়গায় ছয়টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। আরেকটি হয়েছে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার।

১৮৬৯ সালে ভারতের কুচবিহারে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, ১৮৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে হয় ৭ দশমিক ১ মাত্রার, ১৮৯৭ সালে ভারতের আসামে ৭ দশমিক ৭ মাত্রা, ১৯১৮ সালে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ও ১৯৩০ সালে আসামের ধুবরি জেলায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।

১৭৬২ সালের বার্মা যা বর্তমানে মিয়ানমার, এর আরাকানে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।

কী করণীয়?

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে অনেক ক্ষেত্রে ভবনগুলোর ফায়ার সেফটি ব্যবস্থাপনা দেখতে গিয়ে ভবনের নকশার ত্রুটির বিষয়গুলো উঠে আসে। সেসব বিষয় দেখভাল করে রাজউক। তারা এ বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

তারা আরও বলেন, ভূমিকম্প বা ভবন ধসের পর গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির লাইন থেকে আরও দুর্ঘটনা এড়াতে বিকল্প অবকাঠামো দরকার। মাটির নিচে যেসব লাইন রয়েছে সেগুলোরও আধুনিকায়ন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হলে ভূমিকম্প সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এর জন্য খরচও খুব বেশি না। সেটা নির্ভর করে ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির মনমানসিকতার ওপর। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রাজধানীতে ঘনবসতি এলাকা কমিয়ে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া পুরোনো ভবনগুলোতে বসবাসের বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানো উচিত বলেও তারা পরামর্শ দেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান  বলেন, ভূমিকম্প ঝুঁকি নিরূপণ করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ দশটি শহরের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন  বলেন, অনেকেই বলছেন ঢাকা শহরে যেকোনও সময় ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কিনেছি। জনবল প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ আমাদের জন্য ঝুঁকি। পুরান ঢাকার মতো যেসব সরু রাস্তা রয়েছে, কোনও ঘটনা ঘটলে সেসব জায়গায় পৌঁছানো কতটুকু সম্ভব হবে, তা এখনই চিন্তা করা উচিত।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!