মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ, ঢাকাকে ‘অবরুদ্ধ’ করার চিন্তা আওয়ামী লীগের 

বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকা ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়তে পারে। পরিবহন খাত, সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো পরিকল্পনা আঁটছে। আওয়ামী লীগ ঢাকার প্রবেশমুখে এবং ভেতরেও নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। পরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক পাহারায় থাকবে। সরকার, আওয়ামী লীগ ও পরিবহন খাতের সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন দলের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ রাজধানীর অন্যতম বড় প্রবেশমুখ সাভারে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ওই দিন রাজধানীতে দুটি সমাবেশ করতে দলের অনুমতি চেয়েছে।

সমাবেশের সিদ্ধান্ত না পেলে ওই দিন রাজধানীর প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে অবস্থান নেবেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সহযোগী সংগঠনগুলোও নিজেদের সুবিধামতো স্থানে সতর্ক অবস্থান নেবে। এ ছাড়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকার মহাসমাবেশের সময়ও পরিবহন ধর্মঘট ডেকে কিংবা পরিকল্পিতভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। ফলে বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতো ঢাকায় বড় জমায়েত করা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।

তাঁরা সব থানাতেই সমাবেশ করবেন। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সমাবেশ। তিনি দাবি করেন, এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের সম্পর্ক নেই। তবে বিএনপি যাতে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য না করতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।

পনিরুজ্জামান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কী কী প্রস্তুতি থাকবে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শেষ মুহূর্তে নানা দিকনির্দেশনা আসবে। সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টিও থাকবে। তবে নিজেদের পরিকল্পনা তৈরির কাজে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির ছক তৈরি করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির ‘ঢাকা অভিযাত্রা’ করতেই দেওয়া হয়নি। এবার হয়তো এমনটা হবে না। তবে বিনা বাধায় কয়েক লাখ লোক ঢাকা এনে বসে পড়বে, এটাও হতে দেওয়া হবে না। তাঁদের সমাবেশ যাতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সীমাবদ্ধ থাকে, সেটাই নিশ্চিত করা হবে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এবার বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এবং আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে ঢাকায় আসতে চাইছে। তারা ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সামনে রেখে জনমনে একটা সাড়া ফেলা এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরির চেষ্টা করছে। এতে সরকারের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, বিএনপিকে স্বাধীনভাবে সমাবেশ করতে দিলে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক লোক এনে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে। এমনটা না হলেও বড় জমায়েত দেখিয়ে নিজেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে প্রমাণ করতে চাইবে। এতে আওয়ামী লীগের কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বলেন, বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে। ঢাকায় করুক, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের সতর্ক পাহারায় রাখবে আওয়ামী লীগ। কারণ, যা–তা করতে দেওয়া হবে না।

আব্দুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আ.লীগ ও কৃষিমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে বিএনপির পরবর্তী গণসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের বাড়তি কোনো পরিকল্পনা নেই। স্থানীয়ভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট হয়তো থাকবে। পাশাপাশি বিএনপির ওই সব গণসমাবেশের দিন কোনো কোনো জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন কিংবা কর্মী সমাবেশ থাকবে। ফলে গণমাধ্যমে বিএনপির গণসমাবেশ একচেটিয়া প্রচার না-ও পেতে পারে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া নয়, তাদের বড় জমায়েত ঠেকানোটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এ জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ দুই স্থানে দুটি সমাবেশ করার চেয়ে পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থানে থাকলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বের হওয়ার সাহস পাবেন না। ঢাকার আশপাশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ যথেষ্ট।

ঢাকা জেলার সমাবেশ

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে ১০ ডিসেম্বর সাভারে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নবীনগর ও বাইপাইলের মাঝামাঝি মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই—এই তিন থানা আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশটির স্থান এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যে এর মাধ্যমে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটকে দেওয়া যাবে। সমাবেশ উপলক্ষে আগের দিন রাত থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান থাকবে।

দক্ষিণবঙ্গের মানুষ লঞ্চ ও পদ্মা সেতু হয়ে আসবেন। এ ক্ষেত্রে লঞ্চ বন্ধ থাকলে জমায়েতের লোকজন আসতে পারবেন না। আর পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর দিয়ে খুব বেশি বিএনপির মিছিল-সমাবেশের মানুষ আসতে পারবেন না। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর এ পার মুন্সিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকবেন।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছে গত ২৯ অক্টোবর। বিএনপির রংপুর গণসমাবেশের দিন ঢাকার আগারগাঁওয়ে বড় জমায়েতের মাধ্যমে জেলা সম্মেলন করা হয়। ওই দিন থেকেই বিএনপির গণসমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো কর্মসূচি থাকছে।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান  বলেন, তাঁরা সব থানাতেই সমাবেশ করবেন। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সমাবেশ। তিনি দাবি করেন, এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের সম্পর্ক নেই। তবে বিএনপি যাতে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য না করতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।

মহানগর আ.লীগের পরিকল্পনা

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘শান্তি সমাবেশের’ নামে দুটি বড় জমায়েত করতে চায়। উত্তর আওয়ামী লীগ তাদের সমাবেশ করতে চায় আগে যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বসত, সেই মাঠে।

আর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে মৌখিকভাবে অনুমতি চেয়েছেন দুই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে এই বিষয়ে দলের উচ্চপর্যায় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে মহানগর কমিটি। তবে ১০ ডিসেম্বর সতর্ক অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান  বলেন, ১০ ডিসেম্বর তাঁরা সমাবেশের অনুমতি চেয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারকেরা এখনো অনুমতি দেননি। দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপির গণসমাবেশের দিন ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে দুটি বিপুল জমায়েতের আয়োজন করা হলে সংঘাতের আশঙ্কা থাকবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ করার অনুমতি না-ও দিতে পারেন। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ওই দিন রাজপথে থাকবে—বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত।

এ লক্ষ্যে মহানগরের ওয়ার্ড-থানা পর্যায়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রস্তুতি সভা চলছে। সমাবেশের সিদ্ধান্ত না হলে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানা কমিটিকে এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। তারা ঢাকার মূল সড়ক ও প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান নেবে। কোথাও কোথাও শান্তি সমাবেশও করা হবে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বুড়িগঙ্গা নদীতে থাকা দুই সেতুর মুখে অবস্থান থাকবে আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে। ঢাকায় করুক, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের সতর্ক পাহারায় রাখবে আওয়ামী লীগ।

কারণ, যা–তা করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের পরিস্থিতি কিংবা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কঠিন জবাব পাবে। হেফাজতে ইসলামের মতিঝিলে অবস্থানের সময় যে পরিণতি হয়েছিল, এর চেয়েও খারাপ পরিণতি বিএনপিকে ভোগ করতে হবে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!