গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে।
সোমবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবটিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তিরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রস্তাবটি পরিষদের বৈঠকে ভোটের জন্য তোলার পর পরিষদের সব সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিলো। তবে প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো দেয়নি দেশটি। নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
এর আগে, গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যত প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে প্রায় সবকটিতেই ভেটো দিয়েছে ইসরাইলের পরীক্ষিত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি অভিযানে অন্তত ৩২ হাজার ২২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত কমপক্ষে ৭৪ হাজার ৪১২ জন। আর হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি পাস হয়নি। মস্কোর অভিযোগ ছিলো, ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতি ইসরাইলের ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে না।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন হতে হবে। যদি কোনো পক্ষ এই যুদ্ধবিরতি ও এর শর্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল।
আলজেরিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকটি অস্থায়ী সদস্যদেশ সোমবার প্রস্তাবটি তুলেছিলো। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৫ সদস্যের (৫ স্থায়ী ও ১০ অস্থায়ী সদস্য) নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সব সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া আলজেরিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত অমর বেনজামা নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ অনেক দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। রক্তক্ষয় দীর্ঘসময় ধরে চলছে। অনেক বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই এই রক্তক্ষয় বন্ধ করার দায়বদ্ধতা আমাদের আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান গাজায় হামলা নিয়ে ইসরাইলের অবস্থানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের মতপার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। গাজায় প্রাণহানি নিয়ে কিছুদিন ধরে ইসরাইলের সমালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমকিার সমালোচনা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ জাতিসংঘে তাদের নীতি পরিত্যাগ করেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে, দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলো যা জিম্মিদের মুক্তির সাথে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে যুক্ত করেছিলো।
তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়া সেই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে কারণ তারা জিম্মিদের মুক্তির সাথে যুক্ত যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করেছিলো। তবুও আজ, রাশিয়া এবং চীন নতুন প্রস্তাবকে সমর্থন করার জন্য আলজেরিয়া এবং অন্যদের সাথে যোগ দিয়েছে কারণ এটির তেমন কোন যোগসূত্র ছিলো না।
“দুঃখের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি, যা একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। প্রস্তাবটিতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয় সম্পর্কিত নয়। যুদ্ধের শুরু থেকে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবস্থান থেকে একটি স্পষ্ট প্রস্থান হলো,” বলেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেছেন, আজকের প্রস্তাব হামাসকে একটি আশা দিয়েছে যে, জিম্মিদের মুক্তি ছাড়াই ইসরাইল আন্তর্জাতিক চাপে যুদ্ধ বিরতিতে যাবে।