কোটা সংস্কারের দাবিতে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সড়কে অবরোধ থাকায় কার্যত সকাল থেকেই অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। তবে বেলা গড়াতেই আর মারমুখী হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। বিকেলে শিক্ষক পেটানো, আগুনসহ কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পরই বাড্ডা লিংক রোডে অবস্থান নেয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে নতুন বাজার এরপর, বসুন্ধরা গেটসহ কুড়িল বিশ্বরোড অবরোধ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে পুরো প্রগতি সরণিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে নতুন বাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় তারা কোটা সংস্কার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান।
মধ্য বাড্ডা এলাকার সড়ক অবরোধ করে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রামপুরা এলাকার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামে ইস্টওয়েট ও ইম্পেরিয়াল কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরুদ্ধ সড়কে পথ নাটকের আয়োজন করে তারা।
নতুন বাজার এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বাধা দেয়া হলে শুরু হয় দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। যা বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে।
এদিকে নর্দা, বসুন্ধরা ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ছিলো নর্থ সাউথসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধ। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মীরপুরের ১০ নম্বর, মাটিকাটা এলাকায়ও সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় এসব এলাকার যান চলাচাল।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মগবাজার থেকে বিশ্বরোড, বাড্ডা, রামপুরা নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড মীরপুর ও উত্তরা এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে তৈরি হয় গাড়ির দীর্ঘ জট। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।
এছাড়া দুুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, উত্তরা জমজম মোড়, মহাখালি, মিরপুর, তাঁতিবাজারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে।
তার মধ্যে দুপুর দুইটার পর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আন্দোলকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ ঘটে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ ও মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকটি ইউনিটের। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নিউ মার্কেটে এলাকায়ও।
সংঘর্ষ শুরু পর ওই এলাকায় ককটেলের শব্দও পাওয়া যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ফলে একেক বার একেক পক্ষ পিছু হটে। থেমে থেমে তাদের মধ্যে চলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন।
তবে বিকেলে খবর আসে ঢাকা কলেজের সামনে এক যুবক গুরুতর আহত হয়ে পড়ে আছেন। তােক উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পরে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ওই যুবককে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবকের মৃত্যু সাইন্স ল্যাবের ঘটনায় হয় বলেও জানান বাচ্চু মিয়া। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।