আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন দিতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দু-এক দিনের মধ্যেই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে সম্মেলনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানাননি ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, তারা নেত্রীর নির্দেশনা না মেনে সম্মেলন পেছানোর চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, তারা নেত্রীর নির্দেশনা না মেনে সম্মেলন পেছানোর চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন
এর আগে ৭ মে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সহযোগী সদস্যগুলোকে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার (১০ মে) সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
জানা যায়, ওই সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দু-এক দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারিখ নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেন কাদের। তবে, আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়-লেখক এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
৭ মে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সহযোগী সদস্যগুলোকে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ মে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ছাত্রলীগের সম্মেলনপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, সম্মেলন পেছানোর চেষ্টা করছেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক। এক্ষেত্রে তারা আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ নেতাদের কাছে সম্মেলন পেছানোর জন্য লবিং-তদবির করছেন।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সম্মেলনপ্রত্যাশী সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা আমরা ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী জানি। তাদের দু-এক দিনের মধ্যে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু তারা তা এখনও করেননি বলে আমরা জেনেছি। এটা আমাদের আশাহত করেছে।
‘সম্মেলন পেছাতে জয়-লেখক তদবির করছেন’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, সভাপতি-সম্পাদক সবসময় বলে আসছেন, আপা যখন নির্দেশ দেবেন তখন সম্মেলন হবে। কিন্তু আপা নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা এখন গড়িমসি করছেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে আপার নির্দেশ ঠেকানোর জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় লবিং-তদবির করে বেড়াচ্ছেন। এমনও হয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে এসে এক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করেছে কিন্তু তাদের দেখা মেলেনি। মনে কষ্ট নিয়ে তারা ফিরে গেছেন। আমরা আশা করব নেত্রীর নির্দেশ মেনে তারা খুব শিগগিরই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করবেন। যদি নেত্রীর নির্দেশনা না মানা হয় তাহলে কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে।
ছাত্রলীগের আরেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যারাই হোন তারা সম্মেলন পেছানোর জন্য এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। সবাই চান আরও কিছুদিন থেকে ক্ষমতা ও ভোগবিলাস উপভোগ করতে। যদি জয়-লেখক এসবের ঊর্ধ্বে উঠে সংগঠন পরিচালনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে নিয়মতান্ত্রিক সম্মেলন দিতে তাদের এত গড়িমসি কেন, এত কার্পণ্য কেন? দুই বছরের জায়গায় চার বছর পর সম্মেলন কেন? তাহলে তো তাদের আদর্শিক ও নীতিনৈতিকতার জায়গায় প্রশ্ন উঠবেই।’
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে নয়-ছয় বা টালবাহানার কোনো সুযোগ নাই। আমরা আদর্শিক কর্মীরা এটা মেনে নেব না। নির্দেশনার পরও আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে সম্মেলনের তারিখ জমা না দেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা আশা করব দু-এক দিনের মধ্যেই তারা জমা দেবেন। যদি জমা না দেন, এটা স্পষ্টই নেত্রীর আদেশ অমান্যের শামিল।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে জয়-লেখক কোনো আপডেট দেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, তারা ডেট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ধরেননি। প্রত্যেকের দুটি করে হোয়্যাটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। আল নাহিয়ান খান জয় মেসেজ সিন করেও উত্তর দেননি।
ছাত্রলীগের কর্মীদের অভিযোগ, সাংবাদিকদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনপ্রত্যাশী নেতাদেরও ফোন রিসিভ করছেন না জয়-লেখক। একধরনের গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।
এদিকে, জয়-লেখকের উদ্দেশে ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণসম্পাদক মেশকাত হোসাইন ফেসবুকে লেখেন, ‘জয়-লেখক ভাই আপনাদের দুই দিনের মধ্যে দপ্তর সেলে সম্মেলনের ডেট দেওয়ার কথা ছিল। খোঁজ নিয়ে জানলাম এখনও আপনারা যোগাযোগ করেননি। কল ধরেন না, মধুতে আসেন না। আসুন, কল ধরুন, সাংগঠনিক আলোচনা করি, ৩০তম সম্মেলন সফল করি।’
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ধরেননি। প্রত্যেকের দুটি করে হোয়্যাটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। আল নাহিয়ান খান জয় মেসেজ সিন করেও উত্তর দেননি
সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, বিষয়টা পুরোপুরি সমন্বয় করছেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক। উনারা এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি আমাদের কিছু বলেননি।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। ২৯তম ওই জাতীয় সম্মেলনের প্রায় দুই মাসের মাথায় ৩১ জুলাই কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে সভাপতি হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন শোভন-রাব্বানী। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।