বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। কোনো নির্দিষ্ট দলের হাতে যেন ভোট ও দেশ আর চলে না যায়।
তিনি বলেন, আমরা একটি তারুণ্যনির্ভর সমাজ দেখতে চাই। যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চাঁদাবাজমুক্ত ও দখলদারমুক্ত দেশ গড়ব ইনশাআল্লাহ।
খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেড়িবাঁধ সংকট নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা অন্তত শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোনো দাবি করতে হবে না, বরং জনগণের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে। এ দেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সবার ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত পৃথক সমাবেশে এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় বক্তৃতা করেন।
কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমির আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।
সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোনো বাক্য এ দেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমির বলেন, ১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, ডামি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এ দেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সে অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আওয়ামী লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধ্বংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ফুঁসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মতো অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাত না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না, বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামী লীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার হতে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সে মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমির মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।
উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত ছিলেন খুলনা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির।