পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বাংলাদেশের জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মত জি-২০ এর মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করেছেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আগত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকসহ অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন এবং একাধিক রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।
শনিবার জি- ২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে সম্মেলনের অধিবেশনের উপর আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
দিল্লীর স্থানীয় সময় রাত ১১টায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংএ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সকালে জি-২০ নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত মন্ডপমে স্বাগত জানিয়েছেন। এরপর সম্মেলনের অধিবেশন শুরু হয়েছে। আজ এক বিশ্ব এবং এক পরিবার শিরোনামে মোট দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দুটি অধিবেশনেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনে আগত একাধিক রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিশেষ দিকগুলো প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বৈঠকসমূহ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কেননা এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা ও দূরপ্রাচ্যের মোট ৩টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদেশের সাথে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, দুদেশের মধ্যে জনশক্তি রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্লাটফর্মে সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে কোনো ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দেয়নি। রাজনৈতিক বা মানবাধিকার ইস্যুতে কোনো প্রশ্ন করেনি বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্যের বিষয়ে অবগত থাকার কথা জানিয়েছেন জো বাইডেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অনেক ভালো। তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য লোকজন পাঠান। তারা আমাদের কোনো চাপ দেন না বরং আপনারা (গণমাধ্যম) আমাদের চাপে রাখেন। আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমালোচকদের মুখে চুলকানি পড়ল।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুললেন জো বাইডেনশেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুললেন জো বাইডেন
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেনের কী কথা হলো—জানতে চাওয়া হলে মোমেন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করেছেন। ছবি তোলা ও কথা বলার একপর্যায়ে বাইডেন কাছাকাছি থাকা একজনের সেলফোন নিয়ে নিজেই শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
মোমেনের বলেন, বাইডেনকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক অবহিত করে বলেছেন, দেশের মানুষকে খাওয়ানো-পরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। বাড়িঘর দেওয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিজের পরিবারের সবাইকে খুন করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন দেশের মানুষই তার পরিবার। তাদের জন্যই তিনি কাজ করছেন। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আছে বলেই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি জানেন যে বাংলাদেশ ভালো করছে।
দুই নেতার কথার এই পর্যায়ে সায়মা ওয়াজেদ এগিয়ে এলে তাকে শেখ হাসিনা বাইডেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
বাইডেন সায়মা ওয়াজেদের কাছে জানতে চান, ‘আপনি কী করেন?’ জবাবে তিনি জানান, তিনি অটিজম নিয়ে কাজ করেন। এতে বাইডেন বেশ উৎসাহিত বোধ করেন।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে জি২০ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতায় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জি২০ জোটের সদস্য ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী দুদেশের ক্রম-বর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং অর্থনীতি, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, ব্যবসা- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ও অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগামীদিনে আরো গভীরভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি দুদেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনাপূর্বক বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণের বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাঁর দেশে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৮ পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়েওল এর মাঝে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় তারা দুইদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও দুদেশের জনগণের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সামনের দিনে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তার প্রশংসা করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পানিসম্পদ উন্নয়নে সহায়তার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানান।
ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে আর্জেন্টিনার মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডক্টর আলবার্তো ফার্নান্দেজ উল্লেখ করেন যে, আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অভাবনীয় ভালবাসা আর্জেন্টাইন জনগণের মন জয় করেছে। এসময়ে প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এই চমৎকার বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শনিবার রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে আগত অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। এরপর তিনি সম্মেলনের তৃতীয় ও সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন।