অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামে উত্তপ্ত ঢাকার শিক্ষাঙ্গন। দুই পক্ষই চায় অধিভুক্তি বাতিল হোক।
অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি দল ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। অন্যদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববার ও সোমবার সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শেষ কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাদের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চলছে।
গত ৩১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা সুবিধা দেয়া হবে। তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট ভবনে আলাদা সেবা দেয়া হবে। থাকবে আলাদা রেজিস্ট্রি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অফিসিয়াল থাকবেন। যে সার্ভিসটা দরকার সেটা ডেডিকেট ওয়েতে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
তবে, তার বক্তব্যের পর পরই তা প্রত্যাখ্যান করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসবো না। সাত কলেজে মিলে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, তা চলমান থাকবে।’
অন্যদিকে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘৭ কলেজ অধিভুক্তি বাতিল চাই আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাবির একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এসময় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অধিভুক্তি বাতিল না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝোলানোর আল্টিমেটাম দেন তারা।
তারা বলেন, ২০১৯ সালে আমরা প্রথম সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার ও তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান আমাদের এ দাবি মেনে নেননি। এখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও আলাদা হতে চায়। তাহলে আবার কেন তাদের অধিভুক্তই রাখা হচ্ছে। আমাদের মেয়েদের জন্য হলে সিট নেই। মেয়েদের হল নির্মাণের চিন্তা না করে তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর সাত কলেজের জন্য আলাদা ভবন করার কথা বলে।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের আগে আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি কলেজ হলো- সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
গত শনিবার ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন করে তাদের রোববার ও সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তারা বলেন, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসবো না। সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, সেটি আমাদের থাকবেই। মন্ত্রণালয় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি করেছে, সে কমিটি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সে সময় দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার কথাও বলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত ২৪ অক্টোবর প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিতকরণ এবং চিহ্নিত সমস্যা নিরসনকল্পে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে এবং কাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।