রবিবার , ২ অক্টোবর ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

ইউনাইটেড এয়ারের বিনিয়োগকারীদের ‘আম-ছালা’ দুটোই গেছে

প্রতিবেদক
Newsdesk
অক্টোবর ২, ২০২২ ১:৩৪ অপরাহ্ণ

লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থই হাওয়া। এখন নতুন করে ঋণ ও বকেয়ার টাকা দিতে হবে বিনিয়োগকারীদের। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ‘আম-ছালা’ দুটোই গেছে তাদের।

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে আবারও ডানা মেলবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টাও করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)

বেবিচকের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রস্তাব ছিল সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফ করার। সেই আবেদনও নাকচ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এখন নিয়মানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া ও দায়-দেনা পরিশোধ করতে হবে বিনিয়োগকারীদের।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) আমাদের কাছে সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের আবেদন করেছিল। আমরা তা নাকচ করেছি।’

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে আবারও ডানা মেলবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টাও করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ

‘আমরা সারচার্জ মওকুফ করব না, মওকুফ করতে পারি না। কারণ, এটা নিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো বিমান প্রতিষ্ঠানকে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হবেও না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানে আট বছর ধরে বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ডানা কখনও মেলবে না। অথচ বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নতুন করে পর্ষদ ঘোষণা করা হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন দেখানো হয় যে ব্যবসা পুনরায় চালু হবে। এ খবরে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ ওই গোষ্ঠী পরে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে বাজার ছাড়ে। আবারও ধোঁকায় পড়েন সাধারণবি নিয়োগকারীরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত প্রতিষ্ঠানটির (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) পেছনে আর সময় না দিয়ে বাজারটা বাঁচানো। ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা— বলছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন  বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ একটি মৃত প্রতিষ্ঠান। ছয় থেকে আট বছর ধরে পড়ে আছে উড়োজাহাজগুলো। এগুলোর উড্ডয়নের সক্ষমতা নেই। এসব উড়োজাহাজ নিয়ে আর স্বপ্ন না দেখিয়ে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনা জরুরি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিমান ব্যবসা অন্য সব ব্যবসার মতো নয়। এটা পুনরায় চালু করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে যারাই এখানে বিনিয়োগ করবেন, তাদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে।’

‘প্রতিষ্ঠানটিতে (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে তারা বের হতে না পারলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে এর লাভ-লোকসান গ্রহণ করতে হবে তাদের।’

ইউনাইটেড এয়ারের সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও বিএসইসি চেয়ারম্যান আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমি বকেয়া রেখেই ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতে সুপারিশ করেছি।’

ঋণ মওকুফ বা অর্থনৈতিক বিষয়টি বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটি বাতিল করেছে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানে আট বছর ধরে বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ডানা কখনও মেলবে না। অথচ বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নতুন করে পর্ষদ ঘোষণা করা হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন দেখানো হয় যে ব্যবসা পুনরায় চালু হবে। এ খবরে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ ওই গোষ্ঠী পরে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে বাজার ছাড়ে। আবারও ধোঁকায় পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা

এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ-উল আলম  বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ৯৭ শতাংশের মালিক জনগণ। সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরায় চালুর লক্ষ্যে বিএসইসিতে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। এছাড়া বেবিচকের কাছে সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের আবেদন করেছি। বেবিচক সারচার্জ মওকুফ করলেই ব্যবসা শুরু করতে পারব। কারণ, ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সারচার্জ মওকুফ করলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যাবে।’

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘সারচার্জ মওকুফ না হলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি চালানো সম্ভব নয়। কারণ, ৫৮ কোটি টাকার সুদ ৩৫০ কোটি টাকা হয়েছে। এ কথা শুনে কোনো প্রতিষ্ঠানই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে না।’

‘আমরা শুনেছি আবেদন নাকচ হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই জানানো হয়নি আমাদের। জানালে কী করণীয় চিন্তা করব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি বিমান সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, নতুন করে একটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানো যত সহজ, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কঠিন পুরাতন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করা। এটা কখনও সম্ভব হবে না।

ইউনাইটেড এয়ারের বর্তমান অবস্থা

২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস নেই। এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তার উত্তরার বাসার অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অনেকটা রাস্তায় রাস্তায় অফিস করছে।

 

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক