নির্মাণ কাজ শেষের দিকে চলে আসায় উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠছে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিক সুবিধা সম্বলিত তৃতীয় টার্মিনাল।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও উদ্বোধন বিষয়ে সোমবার সাংবাদিকদের বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাছের ৮৯ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, ব্যাগেজ স্ক্যানিং, বোর্ডিং ব্রিজ করা, চেক-ইন কাউন্টার এবং কিছু চলাচল ব্যবস্থার কাজ শেষ করা হয়েছে।
‘আংশিক উদ্বোধনের পর টার্মিনাল পরিচালনার কাজ শুরু হবে,’ বলেন মফিদুর রহমান।
শনিবার উদ্বোধনের পর কার্গো টার্মিনাল নির্সমাণসহ অন্যান্য কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে আধুনিক ও মানসম্পন্ন যাত্রী সেবার বিমানবন্দর জরুরি হয়ে দেখা দেয়। এরই অংশ হিসেবে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
বর্তমানে দেশের বড় এই বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। প্রথম টার্মিনাল অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য এবং দ্বিতীয় টার্মিনাল বিদেশ যাত্রীদের।
দুই টার্মিনাল ব্যবহার করে প্রতিদিন দেশে বিদেশের ৩০টি বিমান কোম্পানির ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন যাত্রী চলাচল করেন ১৯ থেকে ২১ হাজারের মতো। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন।
কিন্তু যাত্রীর চাপ প্রতিদিনই বেড়ে চলায় নতুন টার্মিনাল নির্মাণে হাত দেয় সরকার। তৃতীয় টার্মিনাল পুরাদস্তুর চালু হলে বর্তমানের তুলনায় আরও এক কোটি ২০ লাখ অতিরিক্ত যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ তখন বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী চলাফেরা করতে পারবেন।
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সিংহভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছেন জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
আর এর নির্মাণ কাজ করছেন আন্তর্জাতিক তিনটি বড় ঠিকাদারি কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং কনস্ট্রাকশন।
এই স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশনের নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রভৃতি।
তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের নকশা করেছেন প্রখ্যাত ডিজাইনার স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার ও স্থপতি।
তৃতীয় টার্মিনালে থাকছে যে সব সুবিধা
পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের নতুন টার্মিনাল চালু হলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে এখানে।
এই টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে মোট ২৬টি। তবে উদ্বোধনের সময় চালু হতে পারে এর অর্ধেক। আর বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি। এর মধ্যে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার।
বহির্গমনের জন্য ইমিগ্রেশন কাউন্টার হবে ৬৬টি। এর মধ্যে ১০টি হবে স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টার।
আগমনের জন্য মোট কাউন্টার থাকবে ৫৯টি। এর মধ্যে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টার। তৃতীয় টার্মিনালে ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে ১৬টি।
গাড়ি পার্কিংয়ের তৈরি করা হয়েছে বহুতল পার্কিং ব্যবস্থা। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি সেখানে পার্ক করে রাখা যাবে।
তৃতীয় টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। এছাড়াও থাকবে সুপরিসর ডিউটি ফ্রি দোকান ও বহির্গমন লাউঞ্জ।
বহির্গমনের জন্য স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টার থাকায় যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করাতে পারবেন। এজন্য তাদের পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে না।