বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ ২০২২ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

এবার সার্কিট ব্রেকারের ফাঁদে শেয়ারবাজার

প্রতিবেদক

মার্চ ২৪, ২০২২ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

দরপতন রোধে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারদরের সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ১০ শতাংশের পরিবর্তে এখন ২ শতাংশ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিনে কোনো শেয়ার ২ শতাংশের কমে কেনাবেচা হতে পারবে না। অথচ ১০ শতাংশ বেশি দরে কেনাবেচা করা যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা অসম নীতি। বিশ্বের আর কোনো শেয়ারবাজারে এমন নজির নেই। অথচ গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দুইবার এ নীতি বাস্তবায়ন করেছে। এতে কার লাভ হচ্ছে, আর কার ক্ষতি- এ বিশ্লেষণ সময়ের দাবি।

স্মরণ করা যেতে পারে- গত বছর ৭ এপ্রিল ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরদিন ৬৬ কোম্পানির শেয়ারের ভয়াবহ পতন হয়। পতন ঠেকাতে ১১ এপ্রিল থেকে প্রথমবারের মত ওই শেয়ারগুলোর সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ১০ শতাংশ ঠিক রেখে, নিম্নসীমা ২ শতাংশ বেধে দেয় বিএসইসি। দেড় মাস পর গত বছরের ৩ জুন আরও ৩০ কোম্পানির ক্ষেত্রে একই নীতি জারি করে। এর মাত্র দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুন সব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকারের ওপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার নামে দরপতন রোধে এই বিশেষ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার ফলে কোম্পানিগুলোর দর ও লেনদেনে কী প্রভাব ফেলেছিল, তা স্মরণ করা যেতে পারে। গত বছরের ১১ এপ্রিল ৬৬ কোম্পানির শেয়ারদরের নিচের সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ বেধে দেওয়ায় এক দিনে ১০ শতাংশ পতন রোধ করা গেছে। কিন্তু পরের দুই সপ্তাহে ৩২টি শেয়ারের দর ২ থেকে ১৪ শতাংশ দর কমে। বিপরীতে ১ থেকে ১৪ শতাংশ দর বেড়েছিল ২১টির। এরপর ক্রমে আতঙ্কে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছেন, কম দামে তা কিনেছে কৌশলী বিনিয়োগকারীরা এবং কারসাজির চক্র।

উদাহরণসরূপ- কাট্টলী টেপটাইলের দর ৮ টাকা থেকে তিনগুণ বেড়ে ২৬ টাকা ছাড়ায় মাত্র আড়াই মাসে। এ দরবৃদ্ধির ফায়দা কে লুটেছে? একই ঘটনা ঘটেছে সাফকো স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, কপারটেকসহ আরো বেশ কিছু শেয়ারে। ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইসের সাথে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নেতিবাচক প্রভাব ওই ৬৬ শেয়ারে ছিল না। উল্টো পরের এক মাসে ৫৭ শেয়ারের দর আরও বাড়ে। এর মধ্যে ২৭টির দরবৃদ্ধির হার ছিল আগের আড়াই মাসের তুলনায়ও বেশি। যেমন অলিম্পিক এপেসরিজের দর ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন ৩৩ শতাংশ বাড়লেও পরের এক মাসে বেড়েছিল ৭৫ শতাংশ। সার্কিট ব্রেকারের কারণে যে দরপতন হয় না, তার প্রমাণ ওই ঘটনাই।

শুধু শেয়ারদর নয়, লেনদেনেও উন্নতি হয়। গত বছরের ৮ এপ্রিল ৬৬ শেয়ারের লেনদেন ছিল ২২ কোটি টাকার। এর মধ্যে সোনারবাংলা ইন্সুরেন্সের ছিল ১১ কোটি টাকার বেশি। ১৭ জুন সার্কিট ব্রেকারের তুলে দেওয়ার দিনে এসব শেয়ারের লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ১১৯ কোটি টাকা। এর এক মাস পর ১৫ জুলাই ২০৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তাহলে খুবই সাময়িক সময়ের জন্য আরোপ করা সার্কিট ব্রেকারের ওই নিয়ম এখন তুলে দিলে দরপতন হবে নাকি নেপথ্যে থেকে কেউ দরপতনকে উস্কে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দরপতনের ভীতি ও বিশেষ ‘সেন্টিমেন্ট’ তৈরি করছে।

গত রোববার বড় দরপতনের দিনে লেনদেনের শুরু হয়েছিল সূচকের বৃদ্ধি দিয়ে। হঠাৎ বৃহৎ মূলধনী কয়েকটি কোম্পানির দরপতনের কারণে দিয়ে সূচক কমে যায়। এ ধারা কারা তৈরি করেছিল? এর পর সাম্প্রতিক দুবাই রোডশো’র সময় গত ৮ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সূচক ৩০৯ পয়েন্ট বেড়েছিল কাদের বিনিয়োগে? সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এখানে ভূমিকা ছিল না। গত ৭ মার্চের দরপতনের দিন লেনদেনে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অংশ যেখানে ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নেমেছিল ২০ থেকে ৫ শতাংশে। ঠিক তার পরের দুইদিনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিষ্ফ্ক্রিয় ব্রোকার ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক হঠাৎ করে বিনিয়োগ করে। তখন বাজার ৩০০ পয়েন্টের বেশি রয়েছে। আবার  তৃতীয় দিনে তারাই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এ ধরণের প্রবণতার বিচার বিশ্নেষণ জরুরি।

এটা ঠিক যে, সার্কিট ব্রেকারে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে একদিনে বড় দরপতন হয়নি। কিন্তু এর সুবিধা নেয় কৌশলী বড় বিনিয়োগকারী ও কারসাজি চক্র। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ভয় ধরিয়ে কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেয়। সময়মত দাম বাড়িয়ে ফের ওই শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই কিনে নেয়। অন্তহীন এ চক্র চলছে বছরের পর বছর।

বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক দরপতনের কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ। আসলেই কী তাই? এটা ঠিক যে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ওই দিনের দরপতনের মাত্রা বেশি ছিল। ৭ মার্চ পর্যন্ত সূচক হারিয়েছিল ৪৯২ পয়েন্ট। কিন্তু এ দরপতনের সূচনা হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধের আগেই সূচক কমেছিল ১৪০ পয়েন্ট। তাহলে ওই দরপতনের কারণ কী ছিল?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট হুমকি দিয়েছিল, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে তারা বসে থাকবে না। এর মানে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের ভয় ছিল। করোনা মহামারিতে নাকাল বিশ্বে বিশ্বযুদ্ধ বাধলে অর্থনীতির ক্ষতি বুঝতে বিনিয়োগকারীদের গবেষক হওয়ার দরকার ছিল না। ফলে ওইদিন সূচকের ১০৯ পয়েন্ট পতনকে অস্বাভাবিক বলা যায় না। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারির ১৬৩ পয়েন্টের পতনের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ ততদিনে পরিস্কার, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো সরাসরি অংশ নিচ্ছে না, অর্থাৎ বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছে না। এমন ধারনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি খোদ রাশিয়ার শেয়ারবাজারের সূচক ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছিল, যা আগের দিন ৩৩ শতাংশ পতন হয়েছিল। ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ এশিয়ার সব শেয়ারবাজারের সূচক বেড়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল শুধু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। এটি কেন?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ক্ষতি খুবই কম- এটা এখন সবাই জানে। কারণ এ দুই দেশের সাথে বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য মোটের মাত্র ১ শতাংশ। উপরন্তু তালিকাভুক্ত ৩৪৮ কোম্পানির মধ্যে ১০-১৫টির সামান্য ক্ষতি হলেও বাকিদের ক্ষতির আশঙ্কা খুবই কম। তাহলে এখানে শেয়ারবাজারে দরপতন হবে কোন যুক্তিতে? আর থাকে পরোক্ষ ক্ষতি; বিশেষত জ্বালানি ও ভোজ্য তেলসহ কিছু ভোগ্যপণ্যের পণ্যের দরবৃদ্ধি।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে ক্ষতি আছে। কারণ এটা ছাড়া কোনো কারখানা, পরিবহন কিছুই চলে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কী বাংলাদেশে বেড়েছে, না-কি সরকার বলেছে বাড়াবে? সরকার তেল আমদানি করে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে। স্বল্পমেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারের দর ওঠানামার প্রভাব তাতে থাকে না। তাছাড়া সরকার তেল বিক্রি করে কখনও মুনাফায় বা কখনও ভর্তুকিতে। সরকার বলেছে, এখনই তেলের দাম বাড়াবে না। তাহলে ভয় কীসের? তবে হ্যাঁ, দেশে না বাড়লেও বিদেশে তো তেলের দাম বেড়েছে। তাতে জাহাজে আমদানি-রপ্তানির পরিবহন খরচ বাড়ছে।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক