বসবাসের ‘অনুপোযোগী’ রেখেই উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প শেষ করতে যাচ্ছে রাজউক। প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও এখনও অনেক কাজ বাকি। এ নিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক অভিযোগ করেছেন অ্যাপার্টমেন্টের মালিকরা।
প্রকল্পে নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি তদন্ত করে ভবন মালিকরা মোট ৩১টি অভিযোগ তুলেছেন। এগুলো নিয়ে ৮ আগস্ট রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকও করেন তারা। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বিষয়গুলো সহজভাবে দেখছেন। আবার অধিকাংশ অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রকল্প পরিচালক মোজাফফর উদ্দিন।
ফ্ল্যাট মালিকদের অভিযোগ—২০১৬ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফায় সাড়ে ৫ বছর মেয়াদ বাড়ালেও এখনও অনেক কাজ বাকি। প্রকল্পে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি, বৃক্ষরোপণও হয়নি। ২৩টি ভবনের ৬৩০টিতে পার্কিং ঘাটতি রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও অগ্নিনির্বাপণ
অনুমোদিত লে-আউটে দুটি সাব স্টেশনের ১০টি ফিডারের মাধ্যমে ৭৯টি ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু বাস্তবে ৫টি ফিডারে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৬টি সাব স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলোর দায়িত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে সংযোগ দেবে ডেসকো।
সূত্র জানিয়েছে, মাস্টারপ্লান অনুযায়ী ৬টি সাব স্টেশন অনুমোদিত থাকলেও ২০১৮ সালে ওটা বাস্তবায়ন না করে বাজেট কমানো হয়েছিল। পরে ফ্ল্যাট মালিকদের আন্দোলনের ফলে আবার সংযোজন করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লষ্টরা জানিয়েছেন, পিডব্লিউডি ২০১৪ সালের সিডিউল অনুযায়ী বিল্ডিংয়ের ফায়ার ফাইটিংয়ের মোটর ড্রাইভিং ডিজেল ইঞ্জিন পরিচালিত ফায়ার পাম্প লাগানো হয়নি। এতে আগুন লাগলে সব সার্কিট বন্ধ হয়ে যাবে। পানির পাইপেও চাপ থাকবে না। তাই দামি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে তা কাজ করবে না। এ ছাড়া ফায়ার হাইড্রেন্টে পানির পাইপ গ্যাস ওয়েল্ডিং করার কথা থাকলেও সেখানে করা হয়েছে আর্ক ওয়েল্ডিং।
আবার জেনারেটর সেট এসেম্বলিং করার কথা ছিল জাপান, আমেরিকা কিংবা ইউরোপ থেকে। সেখানে লাগানো হয়েছে চীনের অ্যাসেম্বল করা যন্ত্রাংশ। এ নিয়ে রাজউক কোনও জবাব দেয়নি।
সিডিউল অনুযায়ী সাব স্টেশনের এলটি বা লো টেনশন প্যানেল ব্যাকিং ক্যাপাসিটি ৬৫ কেএ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৫০ কেএ।
বিকল লিফট
প্রকল্পের অনেক ভবনের লিফট বিকল হয়ে পড়েছে। প্রায়ই লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের চাপে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি করা হলে তাতে অনিয়মগুলো ধরা পড়ে। কিন্তু সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সুদ ও বিলম্ব ফি ছাড়া কিস্তি
২০১৬ সালের পর ৫৪ মাস পার হলেও প্রসপেকটাসের ৬খ ও ৭ক অনুযায়ী সম্পূর্ণ বাসযোগ্য না হওয়ায় ৫-৮ কিস্তি বিলম্ব ফি ছাড়া আদায় করা ও প্রকল্প চলাকালীন রিয়েল স্টেট আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি করেছেন ভবন মালিকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক এ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলাম বাংলা বলেন, আমাদের বড় সমস্যা হলো ফ্ল্যাটের কিস্তি। ২০১৬ সালে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে অনেক পরে। কিন্তু সুদ কমানোর বিষয়ে কোনও চিন্তা নেই রাজউকের। তাছাড়া আমরা যারা আগে কিনেছি তাদের ৮ কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। পরে যারা কিনেছে তাদের জন্য ১২ কিস্তি। এটা বড় একটা বৈষম্য।
এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ৯ শতাংশ হারে সুদ বা বিলম্ব ফি নিয়ে কিছু করার উদ্যোগ নেবেন।