জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন— জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন (২১), সদস্য লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব (২৪)। হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলী (২৫)।
এর মধ্যে আহসান উল্লাহ পলাতক। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাকি তিন আসামি মাসুদ রানা, ইসাহাক ও লিটন কারাগারে আছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি খুনের দায়ে জেএমবির পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।
২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি হত্যার দায়ে জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স (দণ্ডাদেশ অনুমোদেনের জন্য নথি) হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করে।
দণ্ডিতরা হলেন— জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী, একই এলাকার ইসাহাক আলী, বগুড়ার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া ওরফে রফিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম রাজারহাটের মকর রাজমাল্লী এলাকার আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ারচর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন। দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লব পলাতক রয়েছেন। হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ।
চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তারা হলেন— নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান, সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ।
জেএমবির ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী।
পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিকে কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি এলাকায় গুলি করে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জঙ্গিরা।