দুই মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসছেন। আগামীকাল বুধবার তাদের ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বিদেশি চিকিৎসকদের আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ঢাকার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বিদেশি চিকিৎসক আনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিলো। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তিন চিকিৎসকের আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের ভিসা পেতে যাতে সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। উনারা (বিএনপি) যখন আমাদের জিজ্ঞাসা করেছেন, তখন আমরা অনাপত্তি দিয়েছি। উনাদের (চিকিৎসক) আসার ব্যাপারে যে যে ব্যবস্থার কথা বলেছেন সকল সহযোগিতা করেছি।
বিএনপি লিখিতভাবে চিকিৎসক আনার অনুমতি চেয়েছিলো বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, গতকাল (সোমবার) দুটো জিনিস চেয়েছেন। একটা, উনাকে ট্রিটমেন্ট করার পারমিশন লাগে, সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়ে দিয়েছে। তাদের ভিসার ব্যাপারে অসুবিধা হবে না। আমরা অনাপত্তি দিয়েছি।
গত ৯ অগাস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। লিভার জটিলতা, কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
সম্প্রতি মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। এরপর তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়েছিলো তার পরিবার। কিন্তু সরকার সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।
সরকারের ভাষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছিলো। সেটা চলমান থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই।
এখন খালেদা জিয়া কারাগারে ফিরে গিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। কিংবা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছেও ক্ষমার আবেদন করতে পারেন।