নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারিক আদলতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার বিরুদ্ধে মামলা চলতে কোনো বাধা নেই।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন।
আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
গত ১৭ মে বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষে মামলার অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে আইনজীবী কায়সার কামাল। গত ৯ আগস্ট মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আংশিক শুনানি শেষে আদালত মামলাটির জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্যের আদেশ দেয়।
কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে নাইকোর হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
চলতি বছরের ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত মামলার অন্য আসামিরা হলেন-তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
গত ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন হাইকোর্টে আবেদন জানান।
এরপর নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে খালেদার আবেদনের শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছর এবং জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের সাজা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় ওই দুই মামলায় সাজা খাটার মধ্যেই পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। বাসায় থেকে চিকিৎসা করার এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে তিনি বর্তমানে রাজধানীর গুলশানের বাসায় থাকছেন।