হলের কক্ষে থাকা ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম জব্দের নোটিশের প্রতিবাদ ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে গভীর রাতে বিক্ষোভ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অপরাজিতা হলের ছাত্রীরা। ১৬ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ছাত্রীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা হল প্রাধ্যক্ষের আচরণ ও হুমকির প্রতিবাদ জানান।
‘হল আমাদের অধিকার, সুযোগ নয়’, ‘প্রভোস্ট কই, প্রভোস্ট কই, প্রভোস্টকে আসতে হবে’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রীরা। তারা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যা সমাধান ও দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসও দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষ না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অপরাজিতা হলের ছাত্রীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরাও ওই হলের ফটকে অবস্থান নেন। ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা রাত ২টার পর আন্দোলন স্থগিত করে হলে ফেরেন।
অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা রিম্মি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের সবার দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাই না সন্তানেরা কষ্ট পাক। তাদের হল তারা যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে চালাবো। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কখনও পতিপক্ষ হতে পারে না।’
আন্দোলনরত ছাত্রীরা অভিযোগ করে জানান, হলের প্রতিটি কক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম (রাইস কুকার, হিটার) আগামী সাত দিনের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু ছাত্রীরা এটা করতে রাজি নন। এ নিয়ে বিভিন্ন মিটিংয়ে ছাত্রীদের বাবা-মা তুলেও কথা বলেছেন প্রাধ্যক্ষ। তিনি ছাত্রীদের ভয়-ভীতি দেখান ও হুমকি দেন। ছাত্রীরা ভয়ে এর প্রতিবাদ করতে পারেন না। তারা অভিযোগ করেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া নিয়েও ছাত্রীদের হয়রানি করে হল প্রশাসন। কোনও বিষয়ে অভিযোগ করলেও তার সমাধান করেন না। এমনকি হল নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও করা হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন বলেন, ‘আজকে যেহেতু একটি অনভিপ্রেত ঘটনা (আত্মহত্যার চেষ্টা) ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তিনি হয়তো শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারেননি।’
শিক্ষার্থীদের ১০ দাবি
১. রাইস কুকার ও রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
২. যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে।
৪. পানিতে পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫. প্রভোস্টদের নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদের ডেকে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৭. যেকোনও পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৮. যেকোনও পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৯. আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনও শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া যাবে না।
১০. দাবি না মানলে প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ১৬ আগস্ট অপরাজিতা হলের এক ছাত্রী বঁটি দিয়ে নিজের গলা কাটার চেষ্টা করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নির্দেশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইস কুকার, হিটার এগুলো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় ছাত্রীদের হলের সিট বাতিলের হুঁশিয়ারি দেয় হল প্রশাসন।
এছাড়া কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমকানো ও শাসানো হয়। ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, একজন সহকারী প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলেন, হল তোমাদের সুযোগ, অধিকার না। যার সমস্যা সে হল থেকে নেমে যাও।