ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তার স্বজনদের দাবি, ওই ব্যক্তিকে ‘অবৈধভাবে’ পাঁচ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। আর এর ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার পর ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. মাহিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় ওই তরুণের বড় ভাই মো. শাকিল মিয়া অভিযুক্ত এসআই মো. মাহিম উদ্দিনসহ চারজনের নামসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উপজেলার ছলিমগঞ্জের বাড়াইলের তবি মিয়া (৩৪), একই গ্রামের আল আমিন (৩২) এবং বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচরের আয়নাল হক (৩০)।
মৃত মো. আব্দুল্লাহ (২৩) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হেফাজতে ছিলেন বলে দাবি স্বজনদের।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার ছলিমগঞ্জের তবি মিয়ার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তবি মিয়ার এক আত্মীয় নবীনগর থানায় একটি অভিযোগ করেন। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে তবি মিয়ার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন আব্দুল্লাহকে চোর সন্দেহে ছলিমগঞ্জ বাজারের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সামনে থেকে আটক করেন। প্রথমে আব্দুল্লাহকে রাস্তায় এবং পরে তবি মিয়ার বাড়িতে নিয়ে পিটুনি দেওয়া হয়। সেখানে তাকে আটকে রেখে নির্যাতনও করা হয়।
পরে আব্দুল্লাহকে ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আব্দুল্লাহকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তবে এসআই মাহিম উদ্দিন বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে আব্দুল্লাহকে পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রাখেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুল্লাহ।
রোববার বিকালে আব্দুল্লাহকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়।
এরপর সোমবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত আব্দুল্লাহর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রিন্স সরকার। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নিহত আব্দুল্লাহর কপাল ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে নিহত মো. আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত।
জেলা পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক জানান, এ ঘটনায় এক পুলিশ সসদ্যসহ চার জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সব আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, এসআই মাহিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার সকালেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতের স্বজনরা এ ঘটনায় দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও যথাযথ বিচার দাবি করেছেন।

















