মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

চীনের প্রাচীর ভেঙে যেভাবে ভারতকে জুড়ছেন শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ভারতে অবস্থান করছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে দিল্লিতে পৌঁছানোর পর সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নিজের ১৩তম বৈঠক করেছেন।

সেখানে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যু, পানি-বণ্টন এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন শেখ হাসিনা। স্বাক্ষরিত হয়েছে সাতটি সমঝোতা স্মারক। দিল্লির সূফী সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার ও দরগাহ তিনি আগেই পরিদর্শন করেছেন। আর বৃহস্পতিবার আজমির শরীফে মঈনুদ্দিন চিশতির মাজার পরিদর্শনের মাধ্যমে কার্যত শেষ হাসিনার ভারত সফরের সমাপ্তি হচ্ছে।

কিন্তু এই সকল কূটনৈতিক শব্দচয়ন বিবর্ণ হয়ে যায় যদি কেউ শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রকৃত তাৎপর্য দেখতে না পান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় উপমহাদেশের সমগ্র উত্তর-পূর্বে (ভারতের) অর্থনৈতিক সংযোগ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠেছেন।

এটিকে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পুনর্মিলন বলতে হবে – তবে শুধু বাংলার নয়, যা ১১০ বছর আগে লর্ড কার্জন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা আজ যা করছেন তা কেবল এই কারণেই উল্লেখযোগ্য নয় যে, পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন দেশ হওয়ার পর থেকে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে কখনও এমনটি করা হয়নি বরং রেললাইন, সড়ক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ নৌপথের মধ্যে সংযোগ ফিরিয়ে আনা এবং যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের বিষয়ে তার সিদ্ধান্তও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পর এগুলো সক্রিয় ভাবে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা আজ যা করছেন তা হলো ৫৭ বছর আগে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে অংকুরিত হওয়া অনমনীয় চীনা প্রাচীর ভেঙে ফেলা। শেখ হাসিনা অনেক কিছু করছেন

ভারত সফরে যাওয়ার আগে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’ নীতিতে পরিচালিত হয়। ভারত ও চীনের মধ্যে বর্তমান বিরোধ ও মতের পার্থক্য তিনি বোঝেন, কিন্তু সেই ইস্যুতে নাক গলাতে চান না তিনি। শেখ হাসিনা স্পষ্টতই বোঝেন যে, চীন অত্যন্ত ধনী রাষ্ট্র হলেও এবং বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশীদার হলেও ভারতই (বাংলাদেশের) সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী।

২০২০ সালের জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম হয়ে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য পরিবহনের একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হয়।

ভারতীয় পণ্যের যাতায়াতকে সহজ করার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ঠিক অপর প্রান্তে আগরতলা ও আখাউড়ার মধ্যে রেল সংযোগের যৌথ নির্মাণ কাজ চলছে। একইসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণের কাজও চলছে জোরগতিতে।

আরও গভীর হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
যা সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর তা হলো- বাংলাদেশের এক অংশ থেকে অন্য অঞ্চলে জ্বালানি পণ্যের চলাচলে সাম্প্রতিক সহযোগিতা – কারণ শেখ হাসিনা এটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এক পাক্ষিকেরও কম আগে দ্বিপাক্ষিক ট্রানজিট প্রোটোকলের অধীনে ১০টি ভারতীয় জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্কারকে মেঘালয় থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে এবং সেগুলোকে ফের ত্রিপুরায় প্রবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা।

গত ২৫ আগস্ট বিকেলে ভারতীয় ট্যাঙ্কারগুলো মেঘালয়ের ডাউকি স্থলবন্দর ছেড়ে সিলেটের তামাবিল বন্দরে পৌঁছায়। এরপর কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেল সাড়ে ৪টায় তারা তামাবিল বন্দর ত্যাগ করে।

এরপর সেগুলো মৌলভীবাজারের চাতলাপুর ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনে পৌঁছায় রাত সাড়ে ৯টায়। সেখানে ১০টি ট্যাঙ্কার (বাংলাদেশ ভূখণ্ড) থেকে প্রস্থানের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এবং রাতে সাড়ে ১০টায় মনু ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে প্রবেশ করার মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ফিরে আসে।

এটি খুব নির্বিঘ্ন এবং ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ। ভারতের ওই ১০টি ট্যাঙ্কারের মধ্যে তিনটিতে ২১.১৯ মেট্রিক টন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং বাকি সাতটিতে ৮৩ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম তেল বহন করা হচ্ছিল।

তেল পণ্যের এই সাম্প্রতিক চলাচল ও পরিবহনের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করা যাবে না। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে, যখন ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, তখন দেশের এক অংশ থেকে অন্য অংশে – (বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে) ভারত থেকে ভারতে – প্রয়োজনীয় পণ্য স্থানান্তরের বিষয়টিতে আর্থিক সঞ্চয় অবিশ্বাস্য।

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে এগিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও জানেন এবং ভালোভাবে বোঝেন যে, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে উভয় পক্ষের জন্যই সুবিধা রয়েছে — ২০২৩ সালের শেষের দিকে নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার ভারতের আস্থার প্রয়োজন হবে এবং একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং দলটির অনানুষ্ঠানিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করবেন।

আগামী বছরের নির্বাচনে শেখ হাসিনা যদি আবারও জয়ী হন, তাহলে তিনি নজিরবিহীন ভাবে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। এছাড়া ভারতের নেতৃত্বের কাছে স্পষ্টভাবেই শেখ হাসিনার গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই ব্যক্তি ভারতের স্বার্থের প্রতিদান দেন।

আর তাই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উভয়ের জন্যই পারস্পরিক লক্ষ্য অর্জনের সম্পর্ক হয়ে উঠছে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!