মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এবার বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রেখে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে ৯ দিন ধরে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, বেতন-বৈষম্য দূর করে জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।
বুধবার সরেজমিন প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে বসে শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। আর কদম ফোয়ারা থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান করে হাততালি ও স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের এই আন্দোলনের ফলে তোপখানা সড়কের পল্টন-কদম ফোয়ারা এবং কদম ফোয়ারা-পল্টন মোড় অংশে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে এই পথে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে আব্দুল গণি সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হচ্ছে। আর ভোগান্তিতে পড়ছেন ওই পথের যাত্রীরা।
এমপিওভূক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা জামান খান বলেন, সরকার থেকে বেতনের মূল অংশসহ বাড়িভাড়া এক হাজার এবং চিকিৎসা ভাতা পান মাত্র ৫০০ টাকা। তা দিয়ে না হয় মাথাগোজার ঠাঁই, না মেলে চিকিৎসা সেবা। ফলে পরিবার নিয়ে খুবই অর্থ-কষ্টে দিন কাটে তাদের।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তিনি জানান, বর্তমানে সারাদেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি। বাকিগুলো বেসরকারি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী এক কোটি এক লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। মোট শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো।
এদিকে মঙ্গলবার আন্দোলন চলা অবস্থায় করোনার শিখনঘাটতি রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ওই নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্দেশনাগুলো হলো- প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি সক্রিয় তদারকি, শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর ভূমিকা, কোভিড-১৯ অভিমারির কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কোনরূপ মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করা, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
এ ব্যাপারে শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা চলমান অবস্থায় মাউশি যে চিঠি দিয়েছে তা শিক্ষকদের আরও উত্তেজিত করেছে। যে শিক্ষকরা স্কুলে তালা দিয়ে ঢাকায় এসেছে তাদের চিঠি দিয়ে ক্লাসে ফেরানো সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী সঙ্গে বসার কথা রয়েছে। তবে কখন, কোথায় বসা হবে তা এখনো জানানো হয়নি।