আজ পদ্মা রেলসেতুতে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কমলাপুর থেকে ভাঙা পর্যন্ত চলবে তিন জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এ রেলপথ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কপথ চালুর প্রায় দেড় বছরের মাথায় শুরু হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচল। পদ্মার বুক চিরে ট্রেন যাবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। প্রথম ধাপে মঙ্গলবার চালু হচ্ছে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথের রেলের যাত্রা। ফরিদপুর সাথে রাজবাড়ীর রেল সংযোগ আগেই আছে। ফলে বিকল্প আরেকটি পথে পশ্চিমাঞ্চলকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা রেল সেতু চালু হলেও, নতুন এই পথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে খুলনা রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-যশোর রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পদ্মা সেতু দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের। এরিমধ্যে কমলাপুরে নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, শুরুতে দুই-তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে।
নতুন এই রেলপথ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসামান্য অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৫টি জেলা এখন সরাসরি ঢাকার সাথে যুক্ত হবে। আগে তাদের ঘুরপথে যেতে হতো। এখন যাতায়াতের সময় অনেকাংশে কমবে।
ঢাকার ওপর চাপ কমাতে এই রেল সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যদিও অনেকে বলছে- রেল থেকে রিটার্নের পরিমাণটা ভালো আসবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পদ্মা রেল সেতু।
ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত নতুন রেলপথের ভাড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এরইমধ্যে ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি কমিটি।
দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল গত বছর ২৫ জুন শুরু হলেও রেল চলাচল এখনও শুরু হয়নি। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
২০১৬ সালের মার্চে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ।