নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল বউবাজার এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতি ও তাদের চার বছর বয়সী ছেলে সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন এবং পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জামাল উদ্দিন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ভাড়া বাসার দরজা ভেতর থেকে লক করা। পরে নিহতদের স্বজন এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। ভেতরে প্রবেশের পর শিপলুকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। অন্য একটি কক্ষে তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম এবং ছেলে আফরানকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের দুজনের মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া ছিল।
তিনি বলেন, নিহত শিপলু ‘রমজান সমিতি’ নামে একটি সমিতির ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা মহামারির সময় সমিতিটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সমিতির মালিক গ্রাহকের জমা রাখা টাকার বড় অঙ্ক আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর গ্রাহকরা সমিতির মালিক এবং শিপলুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে শিপলু প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ধারণা করা হচ্ছে- ওই হতাশা থেকেই তিনি এমন পদক্ষেপ নেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর দেখি, আমার ভাই ঝুলছে আর ভাবি ও ভাতিজার মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা সবদিক থেকে তদন্ত করছি। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাবুরাইল বউবাজার এলাকায় রমজান সমিতি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। বহু গ্রাহক সেখানে টাকা জমা রাখতেন। তবে করোনা মহামারির সময় থেকে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে সমিতির মালিক গোপনে গ্রাহকের টাকার বড় অঙ্ক নিয়ে উধাও হয়ে যান। এরপর ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা শিপলুকে খুঁজে বের করেন এবং টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। শিপলুর পরিবারও এ কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। পুলিশের ধারণা- এই চাপ ও আতঙ্কের কারণে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা— সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে।


















