দক্ষিণ কোরিয়াতে সামরিক আইন জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় গভীর রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি দেশে জরুরি সামরিক আইন জারির ঘোষনা দিয়ে বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিলো।
সিউলের প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি এবং রাষ্ট্রবিরোধী সব উপাদানের কার্যক্রম দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।
প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পরপরই দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। জাতীয় পরিষদের সদস্যদের ভবনটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, রাজধানী সিউলে পার্লামেন্ট ভবনের সশস্ত্র পুলিশ উপস্থিতি রয়েছে।
ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়ল এ পদক্ষেপ নিলেন। বিরোধ দল প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
ক্ষমতাসীন দলও বিরোধীদের এই ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দুই দলই এই ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তারা সামরিক আইন জারির পদক্ষেপকে ‘ভুল’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে এবং জনগণকে পার্লামেন্টের সামনে সমবেত হবার ডাক দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি, তার সব সংসদ সদস্যকে পার্লামেন্ট ভবনে একত্রিত হওয়ার আহবান জানিয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা লি জায়ে-মিউং জনসাধারণকেও পার্লামেন্টে জড়ো হতে আহবান জানিয়েছনে। আর ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা হান ডং-হুন সামরিক আইন ঘোষণাকে একটি ভুল পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বাড়তি ক্ষমতা দেয়া হয়। এ ধরনের ব্যবস্থায় সাধারণত কোনো বেসামরিক প্রশাসনকে সাময়িকভাবে স্থগিত করে সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে সামরিক ট্রাইব্যুনালও পরিচালনা করা হয়। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম দমনে কঠোর অভিযান চালানোর মতো বিষয়গুলোও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়ার সামরিক আগ্রাসন এবং গুপ্তচর নেটওয়ার্কের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের কারণ। প্রেসিডেন্ট ইউনের এই পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সামরিক প্রস্তুতি বাড়াতে পারে।
এই ঘোষণার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলেও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সামরিক আইনের ফলে নাগরিক স্বাধীনতায় প্রভাব পড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।