জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর, বাংলাদেশের নতুন অভিমুখে যাত্রা শুরুর বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। বরাবরের মতো এ বছরও সাময়িকীটি প্রকাশ করেছে বর্ষসেরা দেশের তালিকা।
এবারের তালিকায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, প্রতি বছরের ডিসেম্বরে বর্ষসেরা দেশ বাছাই করে আসছে ইকোনমিস্ট। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সুখ বা নৈতিক উৎকর্ষতার ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন করা হয় না। বরং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪-এ, অর্থাৎ গত ১২ মাসে যেসব দেশ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, সেই বিচারে সেরা দেশ নির্বাচন করা হয়েছে। সেই বিচারে বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ, রানারআপ সিরিয়া।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের সংবাদদাতাদের মধ্যে বেশ জোরাল বিতর্ক হয়েছে। পরে চলতি বছর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া, আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন।
দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি এক সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান। নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিশাল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় সাধারণত সহিংসতা ঘটে। তবে এবার পরিস্থিতি বেশ শান্তিপূর্ণ। বর্তমানে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে।
ইকোনমিস্ট আরও বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করা দরকার। কবে নির্বাচন হবে তা–ও ঠিক করতে হবে।
আদালতগুলোর নিরপেক্ষভাবে কাজ করা ও বিরোধীদলগুলোর সংগঠিত হবার জন্য সময় দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনোটি সহজ হবে না। তবে, একজন অত্যাচারী শাসককে হটানো এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ আমাদের এ বছরের সেরা দেশ।