বাজারে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ নিয়ে সরকারি ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জাতীয় সংসদ রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক কোটি কার্ড দেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য কমেছে বলে দাবি করেন।
এদিন বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে যারা দেখে না তাদের চোখ নষ্ট। তাদেরকে ডাক্তার দেখাতে হবে। না, প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি। উন্নয়ন হচ্ছে অনেক কিছুর কিন্তু আমরা আরো দেখতে পাচ্ছি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে মানুষের হাহাকার অবস্থা। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছিলেন নিত্যপণ্য আমাদের অনেক আছে। অভাব নেই। তারপরও সমস্ত জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়ছে।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, শুধু তাই নয়- খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন এ যাবতকালের সর্বোচ্চ খাদ্য- প্রায় ২০ লাখ টন খাদ্য গুদামে মজুদ আছে। তারপরও চালের মূল্য এত বেশি বৃদ্ধি পেল কী কারণে?
তিনি বলেন, আমি নিজেও বাজারে যাই। বাজারে গেলে মনে হয় না, সরকার আছে। মনে হয় না কোনপ্রকার সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে।
এ সময় বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, এই যে বিদ্যুতের বিষয়টি-আমার এলাকা করিমগঞ্জ তাড়াইলে গত কয়েকদিন যাবত ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘন্টা বিদ্যুত থাকে। বাকি আঠারো ঘন্টা বিদ্যুত নেই। এই গরমে অসম্ভব কষ্টের মধ্যে আছি। বিদ্যুত মন্ত্রীকে বলবো আমার কথা নোট করেন, দেখেন সত্য কী না?’
চুন্নুর বক্তব্যের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ দাবি করেন এককোটি কার্ড দেয়ার পর বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। চুন্নু সংসদে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে তাকে উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি বাজারে যান বলেছেন। আপনি আসলে বাজারে যান না। আমি বাজারে যাই। এই এককোটি মানুষকে কার্ড বিতরনের পর অনেক পণ্যের দাম কমে গেছে। তেলের দাম কমেছে প্রতি লিটারে ১০ টাকা। পিয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছিল এখন কমে হয়েছে ৩০টাকা। আপনি এখানে অসত্য ভাষণ দিয়েছেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব দ্রব্যমূল্যের উধ্বর্গতি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন- আজকে করোনার কারণে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপে গত কয়েক দশকে মূল্য খাদ্য ও ভোগ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। রুটির দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও কিছু কিছু খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বৃদ্ধি পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এককোটি পরিবারকে কার্ড দেয়া হয়েছে এবং সেই কার্ডের ভিত্তিতে প্রতি পরিবারে ৫ জন করে ৫ কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে খাদ্যপণ্যের দাম অনেক কমে গেছে।’
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, সরকার টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে নিত্যপণ্য বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সেখানে চাল, ডাল, খেজুর, তেল ও চিনি এসব পণ্য একই সঙ্গে নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু একজন গরীব মানুষের খেজুর বা ছোলা দরকার না থাকলেও তাকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই কাজে সরকারের মাঠ প্রশাসন এতবেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে তারা স্বাভাবিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারছে না।
এছাড়াও তিনি নির্মাণসামগ্রী দাম বেড়ে যাওয়ার সমালোচনা করে বলেন, রড ও সিমেন্টসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মান কাজ মুখ থুবড়ে পড়ছে।
বিএনপির আরেক এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে আইনের শাসন ব্যক্তিভেদে একেক রকম। কোন মামলা নিয়ে আলোচনা হলে সেখানে বিচার চাওয়ার বিষয় আসে। বেশিরভাগ খুন, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের কোন বিচার হয়নি।
তিনি এসময় সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনী ও নারায়াণগঞ্জের ত্বকী হত্যাসহ বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন আলোচিত মামলাগুলো তুলে ধরেন।