বাংলাদেশের আকাশে বুধবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা এদিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
মঙ্গলবার দেশের কোথাও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এবার ৩০ রমজান পূর্ণ হয়েছে। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার ঈদ হচ্ছে তা আগেই জানা ছিল।
বিজ্ঞানের তথ্যে এবারই প্রথম ৩০ রোজা হবে ধরে সরকার ছুটি নির্ধারণ করেছে। এই প্রথম ২৯ রমজান সরকারি অফিস খোলা ছিল। আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি।
এদিকে ঈদের একদিন আগেই অর্থাৎ বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন মাজহাব ও দরবারের অনুসারীরা ২২৬ গ্রামে আদায় করেছেন জামাত। ফিতরা আদায়, নতুন জামাকাপড় পরিধান, কোলাকুলি ও মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন অনাবিল আনন্দ।
এদিন রাজধানী ছাড়াও চাঁদপুর, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, রৌমারী, হরিণাকুন্ডু, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, ধর্মপাশা, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, নোয়াখালী, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
ঈদ ধর্মীয় উদযাপন হলেও বাংলাদেশে তা উৎসবেরও। প্রিয়জনের কাছে ফেরা ঈদের প্রধান আনন্দ। শুক্রবার থেকেই লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে গেছেন। জীবিকার জন্য শহরবাসী মানুষ শত ভোগান্তি মেনেও হাসিমুখে ঈদে নাড়ির টানে ছুটেন বাড়ি। ভাঙা মহাসড়ক, যানজট, টিকিটের হাহাকার; কোনো কিছুই এই আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
এবারে ঈদযাত্রা শুরু থেকে নির্বিঘ্ন থাকলেও মঙ্গলবার বিকেল থেকে সারা রাত উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই ভোগান্তির পেছনে মূল কারণ ছিল বঙ্গবন্ধু সেতুতে এবং আরও কয়েকটি স্থানে কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়া। ফিটনেসবিহীন এসব যান অন্য সবার দুর্ভোগের কারণ হয়। অথচ ঈদের আগে সমন্বয় সভা ডেকে গণমাধ্যমকে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া কোনো টোটকাই এদিন কাজে আসেনি। তারা দুঃখ প্রকাশ করলেও এই ভোগান্তি কেন হলো সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে।
তবে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে পরের দিন বুধবার। অবশ্য যাত্রীচাপ কমে যাওয়াই হয়তো এর মূল কারণ। এদিন সড়ক, রেল, নৌপথে যাত্রীরা বাড়ির পথ ধরেছেন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই।
এদিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, গাউসিয়া, নিউ মার্কেটে চাঁদ রাতে ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মিরপুরসহ নগরীর বহু ফুটপাতে পা ফেলার জায়গাও নেই। আর রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর ভিড় বরাবরই মধ্যরাত বাড়ে।
অপরদিকে এই চিত্র শুধু রাজধানীর নয়, সারাদেশে চাঁদরাতে ঈদে শেষ প্রস্তুতি সারছেন উৎসব-আনন্দে থাকা মানুষ।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, গাউসিয়া, নিউ মার্কেটে এলাকায় মানুষের ভিড় থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, চাঁদরাত বিবেচনায় বিক্রি সন্তোষজনক নয়। তাদের দাবি, গেলো রাতে চাঁদ রাত থেকেও বেশি বিকিকিনি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস রাত যতো বাড়বে বাড়বে বিকিকিনি।
অপরদিকে ক্রেতাদের পণ্যের দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন দাম কম আবার কেউ বলছেন বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছেন না। চাঁদ রতে ফুটপাতে বিকিকিনি বেশি হচ্ছে, ক্রেতাদের অনেকেই ভীড় করছেন গহনা, হিজাব, চুড়ি, চাঁদরসহ ফুটপাতের পোশাকের দোকানগুলোতে।
ঈদের প্রধান জামাত
দেশে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদের নামাজ পড়বেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদুল ফিতরে বায়তুল মোকাররমে পাঁচ জামাত
পবিত্র ঈদুল ফিতরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল সাতটায়। পরে এক ঘণ্টা পর পর বাকি চারটি জামাত হবে। শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে ১১টায়।
রাজধানীর পাশাপাশি ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত দেশের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লার ঈদগাহ ময়দান। এরই মধ্যে আবহাওয়া অফিস থেকেও এসেছে সুখবর। তারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারাদেশের আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক থাকতে পারে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
দেশের সবার জন্য সুখী, আনন্দময় ও নিরাপদ ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবার আমাদের মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর এসেছে। ঈদ মানে আনন্দ। আসুন, আমরা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।’
এছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।