বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ১৪ই ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে কাজ করছে সার্চ কমিটি। ইতিমধ্যে নতুন সিইসি ও কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করতে কমিটির পক্ষ থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ নাগরিকরাও এ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী শনি ও রোববার ৬০ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।
নির্বাচন কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর পরপরই সিইসি ও ইসি হিসেবে আলোচনায় আসছে বেশকিছু নাম। প্রশাসন, বিচার ও পুলিশ ক্যাডারের একাধিক সাবেক কর্মকর্তার পাশাপাশি সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নামও আলোচনায় রয়েছে। সার্চ কমিটির সদস্যদের কাছে বিভিন্ন মহল থেকে নাম দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকেও সাবেক কর্মকর্তাদের অতীত-বর্তমান কর্মকাণ্ড ও সর্বশেষ স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। সিইসি পদে আলোচনার শীর্ষে আছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী। ৫০ বছরের বেশি সময় আইন পেশায় নিয়োজিত থাকা বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী দুই দফায় পার্বত্য ভূমিবিরোধ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সিইসি পদে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নামও আলোচনায় আসছে। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সুনামের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন বিসিএস (প্রশাসন) ’৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা।
সিইসি পদে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, সাবেক সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, সাবেক পিএসসি‘র চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাদিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। এ ছাড়াও সাবেক প্রধান বিচাপতি খায়রুল হকের নামও সিইসি পদের আলোচনায় রয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্য ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালদার হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, ইসি’র যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম এর নামও আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন এমন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত তিনজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার নামও ইসি হিসেবে আলোচনায় আসছে। এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে সিইসি করার প্রস্তাব দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পাশাপাশি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে নির্বাচন কমিশনার করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সংসদে সমপ্রতি পাস হওয়া ইসি গঠন আইন অনুযায়ী, সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে অনুসন্ধান কমিটিকে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে শুক্রবার বিকাল পাঁচটার মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে।
এর জন্য গণবিজ্ঞপ্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিটির পক্ষ থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ ৫ জনকে নিয়ে ইসি গঠন করবেন প্রেসিডেন্ট। জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে একজন সিনিয়র আমলা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে
এ ছাড়াও সামরিক বাহিনী থেকে একজন, বিচারবিভাগ থেকে একজন রাখা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি এবার কমিশনে একজন শিক্ষাবিদকে রাখা হচ্ছে বলে আলোচনা আছে। থাকতে পারেন সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবী প্রতিনিধি।