রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরা, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের পর বিশ্লেষণ চলছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সংঘর্ষের উৎপত্তি থেকে শুরু করে উস্কানিদাতাদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে অর্ধশত ব্যক্তির নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। যেকোনও সময় এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সংঘর্ষের ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার তদন্তের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সার্বিক ঘটনায় তৃতীয় কোনও পক্ষ সুযোগ নিয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কেনাকাটা করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করলে সহপাঠীরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অপর দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকজনকে ছুুরিকাঘাত করেছে বলে গুজব ছড়ান নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষই উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৃতীয় একটি পক্ষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একাধিবার ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে যাওয়ার পর আগ বাড়িয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দুটি দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নাকি এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং নিউমার্কেটৈর দোকান মালিক-কর্মচারীদের পক্ষে হেলমেট পরে কারা সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিলেন তাও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের একজন কর্মকর্তার মন্তব্য, প্রথম দিকে শক্তি প্রদর্শন ও ইগোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে এর নেপথ্যে রাজনৈতিক ইন্ধন যুক্ত হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা সুক্ষ্মভাবে ঘটনাটি পুরো শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
পুলিশের ওই কর্মকর্তার দাবি, ঘটনার দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে চায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত দোকান মালিক-কর্মচারীদের সরিয়ে নিতে বলা হয়। তবুও একটি পক্ষ বারবার সংঘর্ষ চলমান রাখার চেষ্টা করেছিল।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় এজহারনামীয় হিসেবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ঢালাওভাবে আসামি করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে মকবুল হোসেন নামে বিএনপির একজন নেতাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ রাজারবাগে পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নিউ মার্কেটে সহিংসতায় কী ঘটেছে তা সবার কাছে পরিষ্কার। সেদিনের ঘটনার ছবি ও ফুটেজ আছে। এগুলো দেখে তদন্ত কাজ এগোবে। এখানে কোনও রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা হচ্ছে না, আর হবেও না।’
আইজিপি উল্লেখ করেন, ‘শুধু সিসিটিভি ফুটেজ নয়, প্রত্যেক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ফুটেজ আছে। একটু ধৈর্য ধারণ করুন। পুলিশ তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’