বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক ভয়াবহ দখলদারি এই সরকার পুলিশবাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে গোটা দেশকে পরাধীন করে ফেলেছে। আমরা আজ ‘নিজ দেশে পরবাসী’ হয়ে গেছি। মানুষ সংগঠিত করে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ জালিম সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই কাজ করতে হবে।
শুক্রবার বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা দেহট্ট হাটপুকুর গ্রামে পুলিশ হেফাজতে যুবদল নেতা আকরাম হোসেনের কবর জিয়ারতের পর তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার প্রশ্ন একটাই পুলিশ কাস্টডিতে আকরামকে কেন প্রাণ দিতে হলো? সুস্থ সবল, একজন যুবক তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। সব মামলায় জামিনে ছিলেন। তারপরেও তাকে ধরে নিয়ে গেছে। শুধু হরিপুরে এমন ঘটনা নয়, এটি সারা দেশে আকরামের মতো প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আন্দোলন চলাকালে প্রায় ৩০ জন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধ মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। ৭-৮শ নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের আন্দোলনের পরে ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি নিজেও সাড়ে ৩ মাস কারাগারে ছিলাম। এর মধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে ছিলেন। এই সরকার সারা দেশকে নির্যাতনের কারখানায় পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এই সরকার দখলদারির সরকার। আমরা কোনো দিন দখলদারি মেনে নেয়নি, আমরা এখনো দখলদারি মেনে নেব না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে এখনো বন্দী অবস্থায় গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে তাকে বিদেশে নির্বাসনে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যে মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় একটা দেশ চলতে পারে না। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা নির্বাচন চাই। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটা সরকার গঠন করতে চাই, যারা দেশের মানুষের কথা শুনবে, দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। আমরা তো বলি না, আপনারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুবদল সদস্য সচিব আকরাম হোসেনের এই মৃত্যু আমাদের ডাক দিচ্ছে। শহিদের রক্ত আমরা বৃথা দিতে পারি না। দলের অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে গেছে, সংগ্রাম করছে, মিথ্যে মামলায় ঝুলছে। তবে কেউ কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি। লক্ষ্য একটাই আমরা দেশকে মুক্ত করেই ছাড়ব।
হাটপুকুর গ্রামবাসীর উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এবার আপনাদের ঈদ আনন্দের হয়নি। আপনাদের ছেলে আকরামকে এ সরকার তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঈদুল ফিতর সাধারণ মানুষের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেনি বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ঈদের আনন্দ সব মিলিয়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে। নিত্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষের খাওয়ার উপায় নেই, বাজারের জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
এর আগে হরিপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নিহত আকরাম হোসেনের কবর জিয়ারতের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মী বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।