পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক ও প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। পাকিস্তানের জিও নিউজ এসব কথা নিশ্চিত করেছে।
জেনারেল পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুর পরপরই দেয়া এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর আন্তরিক শোক প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং বলেছে, আল্লাহ মরহুমের আত্মার মাগফেরাত করুন এবং শোকাহত পরিবারকে শক্তি দিন।
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি অ্যামাইলয়েডসিস নামের এক বিরল রোগে ভুগছিলেন। আমেরিকান হসপিটাল দুবাইয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। এই রোগের কারণে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হয়ে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে।
এক টুইটে তার পরিবার জানিয়েছে, জেনারেল পারভেজ মোশাররফ অ্যামাইলয়েডোসিস রোগের চিকিৎসা থেকে উদ্ভূত জটিলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সাবেক এই সামরিক শাসক গত বছরের জুনে তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
টুইট বার্তায় বলা হয়, একটি কঠিন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় এবং অঙ্গগুলি অকার্যকর। তার দৈনন্দিন জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রার্থনা করুন। উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের মার্চে দেশ ছাড়েন মোশাররফ। তারপর আর তিনি দেশে ফেরেননি।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন।
পারভেজ মোশাররফ ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ ও ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর সংবিধান স্থগিত করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর একটি বিশেষ আদালত তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়।
১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে জন্ম পারভেজ মোশাররফের। তারপর পাকিস্তানে চলে যায় তার পরিবার। করাচির সেন্ট প্যাট্রিকস হাই স্কুলে পড়াশোনা। লাহোরের ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে উচ্চশিক্ষার পাঠ নিয়ে তিনি যোগ দেন সেনাবাহিনীতে।
তারপর ধাপে ধাপে সেনাপ্রধান এবং দেশের ক্ষমতা দখল। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখলে নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।