বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে কর্মী প্রত্যাহার এবং সাময়িক ভিসা প্রদান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। আর তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন (মেডিকেল ট্যুরিজম) খাতে।
ভারতের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা জানাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের বিদেশি মেডিকেল পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাদের অভিমত, বাংলাদেশি রোগীর পরিমাণ ক্ষেত্রবিশেষে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে- যা তাদের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
সাম্প্রতিক কেয়ারএজ রেটিং রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের মোট চিকিৎসা পর্যটনে শতকরা প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ অবদান রাখে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল সংস্থা ‘অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ (এএইচইএল) জানাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক রোগীদের থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আদায়ে শতকরা ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়া। কারণ বাংলাদেশি রোগীদের থেকে যে রাজস্ব আদায় হতো তা ২৭ শতাংশ কমে গেছে।
অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মধু শশীধর জানান, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে সে দেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট কমেছে। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীই ছিলো কম মাত্রার অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীরা, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কেবলমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা ওই ধরনের কিছু ছোট সমস্যার চিকিৎসা করাতে আসতেন। পরবর্তীতে অবশ্য বাংলাদেশের রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায়, তবে গত বছরে এই সময় বাংলাদেশি রোগীর আসার যে প্রবণতা ছিলো, সে অবস্থা এখনও ফিরে আসেনি।
বর্তমানে ভারত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের কেবলমাত্র জরুরি ক্ষেত্রে ভিসা প্রদানের অনুমতি দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে প্রতিবেশী দেশটি থেকে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত ১০-১৫ শতাংশ কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কলকাতার একাধিক হাসপাতালের চিত্রটা এরকম।
মণিপাল হাসপাতালের ক্ষেত্রে, তাদের সামগ্রিক আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক রোগীদের থেকে। কলকাতা এবং বেঙ্গালুরুতে এই হাসপাতালের দুইটি শাখায় মোট আন্তর্জাতিক রোগীর প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ হলো বাংলাদেশি।
মণিপাল হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার কার্তিক রাজাগোপাল বলেন, আমাদের কলকাতা এবং বেঙ্গালুরু কেন্দ্র দুইটিতে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশ থেকে রোগী আসেন। গত জুলাই পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো, এরপর থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। সেসময় বাংলাদেশি রোগীর আসার প্রবণতা কমে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর অক্টোবরে পরিস্থিতির উন্নতি হয় এবং নভেম্বর মাস সবে শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে ৬০ শতাংশ রোগী আমাদের হাসপাতালে আসছেন।
অন্যদিকে ম্যাক্স হেলথ কেয়ারের মোট আয়ে ৯ শতাংশ অবদান রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যবসার। গত অর্থ বছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রথম ছয় মাসে তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে- প্রধানত অন্যান্য বাজার থেকে ব্যবসা বৃদ্ধির কারণে। যদিও বাংলাদেশের বাজার থেকে রাজস্ব আদায় আশ্চর্যজনকভাবে কমেছে।