অলিখিত কোয়াটার ফাইনালে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে আট রানে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান। কয়েক দফা বৃষ্টির পর এক ওভার কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১১৪। তবে ১৭ দশমিক পাঁচ ওভারে ১০৫ রানে অলআউটন হয় শান্ত বাহিনী। এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে সেমিফাইনালে চলে যেতো অস্ট্রেলিয়া।
এদিন ১৮তম ওভারে নাভিন-উল-হক যে বোলিং করলেন তা হয়তো আফগান ইতিহাসে রূপকথা হয়ে থাকবে। ১৭ দশমিক চার ওভারে তাসিকন আহমেদকে বোল্ড করার পর রশিদকে সঙ্গে নিয়ে মোস্তাফিজকে বধ করার ছক সাজাতে থাকেন তিনি। তবে পরিকল্পনা কী ছিল তা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও একদম সোজাসুজি বলটি করে বসেন নাভিন। তাতেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মোস্তাফিজ।
এরপর ম্যাচ জয়ে যে প্রকৃত উচ্ছ্বাস, তা অনেক দিন পর হয়তো আফগানদের মাধ্যমে দেখলে ক্রিকেট বিশ্ব। খুশিতে অঝোরে কেঁদেছেন অনেক আফগান।
আর বাংলাদেশের রথি-মহারথীদের হতশ্রী ব্যাটিং নতুন কিছু নয়। বিশ্বকাপে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেন নাই টপ অর্ডার থেকে টেল এন্ডার পর্যন্ত আট জন ব্যাটার। তার মধ্যে ডাক মেরেছেন তিন জন। অন্য পাঁচ জনের সংগ্রহ মোট সংগ্রহ ১৬।
তবে এদিন আফগানদের বিপক্ষে একাই লড়ে গেছেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। ম্যাচে ফিফটি তুলে নেওয়ার পাশপাশি ৪৯ বলে এক ছয় ও পাঁচ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
ম্যাচ সেরা হয়ে নাভিন বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমরা এই দিনটির জন্য স্বপ্ন দেখছিলাম এবং কাজ করছি। আজ বাস্তব অনুভূতি হচ্ছে।
নাভিন বলেন, আমরা জানতাম, ১২ দশমিক এক ওভারে বাংলাদেশের টোটাল তাড়া করা কঠিন হবে। তাই আমরা জানতাম যে, আমরা খেলায় আছি।
তিনি বলেন, এটা এমন খেলা যেখানে আপনি কখনই জানেন না কী ঘটতে পারে। একটি বাউন্ডারির পরে আপনি অনুভব করেন যে খেলাটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু একটি উইকেট আপনাকে খেলায় ফিরিয়ে আনে। তাই ত্রুটির জন্য মার্জিন খুব কম। এই ধরনের উইকেট বেশি স্কোরিং নয়, তাই আমরা সবসময় খেলায় ছিলাশ। আমরা এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং আমরা সেমিফাইনালে আছি, আমরা খুব খুশি।
শান্ত জানান, পরিকল্পনাটি ছিল প্রথম ছয় ওভারে অ্যাটাক করার, তা ঘটেনি এবং মিডল অর্ডার কার্যকর করতে পারেনি। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করেছি, বিশেষ করে রিশাদসহ ফাস্ট বোলাররা সত্যিই ভালো করেছে। ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। টপ অর্ডার ভালো পারফর্ম করতে পারেনি।
বিজয়ী অধিনায়ক রশিদ খান বলেন, আমরা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছি, দল হিসেবে সেমিফাইনালে থাকাটা আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সময় আমাদের এই বিশ্বাস এসেছিল। জয়ে অনুভূতি বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ আমার কাছে নেই।
রশিদ বলেন, একমাত্র ব্রায়ান লারা আমাদের সেমিতে যাওয়ার মন্তব্য করেছিলেন। আমরা এটি সঠিক প্রমাণ করেছি। আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা তোমাকে হতাশ করবে না।
তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম এই উইকেটে ১৩০-১৩৫ ভালো টোটাল। আমরা ১৫-২০ রান কম ছিলাম। তিনিও বলেন, ১২ ওভারে বাংলাদেশের রান তাড়া কঠিন হবে এটা আমরা জানতাম। সেখানেই আমরা সুবিধা নিয়েছি। সবাই চমৎকার কাজ করেছে। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের শক্তিশালী ভিত্তি আছে, বিশেষ করে বোলিংয়ে।
রশিদ বলেন, বৃষ্টি কখন খেলা চলছিলো, আবার কখনও বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরা মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। আমরা জানতাম, সেমিতে যেতে একটিই পথ, সেটি হলো ১০ উইকেট নেওয়া।
তিনি বলেন, বাড়িতে ফিরে এটি একটি বিশাল উদযাপন হবে, আমরা এর জন্য গর্বিত। সেমিফাইনালে থাকাটা এখন বড়। আমাদের জিনিসগুলো সহজ রাখতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা বড় উপলক্ষ উপভোগ করছি।