বাগেরহাটে বিভিন্ন কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাইসাইকেল। চাকা থেকে শুরু করে পুরো সাইকেল তৈরিতেই ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। দেশের বাইরে ‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ হিসেবে ব্যবহৃত যানটি এরই মধ্যে গ্রিসে ২০ হাজার পিস রপ্তানি করা হয়েছে।
নজরকাড়া কাঠের এই সাইকেলটি তৈরি করছে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচরাল ফাইবার নামে প্রতিষ্ঠান। কাঠের সাইকেলের পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে কাঠ দিয়ে হোটেল বেড, সান বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে।
শুরুর কথা
প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। প্রথম দিকে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ম্যাট্রেস, কয়ার ফেল্ট, কোকা পিট, ডিসপোজেবল স্লিপারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। ওই পণ্যগুলো দেশ বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর ২০২৩ সাল থেকে কাঠের সাইকেল এবং কাঠের বিভিন্ন পণ্য তৈরি শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানে।
সরেজমিন
ফ্যাক্টরি গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক হাত ঘুরে কাঠ দিয়ে সাইকেলের চাকা, ফ্রেম এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। কাঠ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাইসাইকেল বা ‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’। সাইকেল তৈরিতে আকাশমনি, গামারী, মেহগনিসহ মূল্যবান বিভিন্ন গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে।
যেভাবে তৈরি হয় কাঠের সাইকেল
কারিগর আব্বাস আলী জানান, প্রথমে সাইকেলের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। এরপর বিভিন্ন অংশ জুড়ে তৈরি করা হয় ‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ নামে সাইকেল। একটি সাইকেল তৈরিতে সময় লাগে দুই দিন।
শরিফুল ইসলাম জানান, সাইকেল তৈরি করতে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ১১টি যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। এরপর কাঠের এসব যন্ত্রাংশ ফিটিংস করে পুনাঙ্গ সাইকেলে তৈরি করা হয়। তার পর রঙ করে সাইকেল দৃষ্টিনন্দন করা হয়।
ঘুরছে সংসারের চাকাও
কারখানাটির শ্রমিক রেখা রাণী জানান, কারখানায় অনেক শ্রমিকের হাতের ছোয়ায় তৈরি হয় কাঠের সাইকেল। তাদের হাতে তৈরি সাইকেল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এটা অনেক আনন্দের। একই সঙ্গে এই কাজ করে সংসারের হালও ধরতে পেরেছি।
তন্নি জানান, তারা শুধু কাঠের সাইকেল নয়, কাঠ দিয়ে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি করছে। তার মতো বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিকের এই কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে।
উদ্যোক্তার কথা
কাঠের সাইকেলে তৈরির উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহম্মেদ। তিনি জানান, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে তারা ইউরোপের দেশ গ্রিস থেকে তিন লাখ বেবি ব্যালেন্স বাইকারের অর্ডার পান। এছাড়া কাঠের তৈরি হোটেল বেড, সান বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচারের অর্ডার রয়েছে। অর্ডার অনুযায়ী কাঠের এসব পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। তার ফ্যাক্টরিতে তৈরি কাঠের বেবি ব্যালেন্স বাইকার এবং কুকুর-বিড়ালের খেলনার প্রথম চালান ২০২৩ সালের ডিসেম্বর রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার পিস বেবি ব্যালেন্স বাইকার গ্রিসে এবং কুকুর-বিড়ালের বেশ কিছু খেলনা বেলজিয়ামে রপ্তানি করা হয়েছে।
তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে কাঠের সাইকেল এবং বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করা হবে। সাইকেলের দ্বিতীয় চালান শিগগিরই রপ্তানি হবে। বেবি ব্যালেন্স বাইকারের পাশাপাশি বড়দের বাইকারেরও অর্ডার পাওয়া গেছে। বিদেশের বাজারে একটি বেবি ব্যালেন্স বাইকার সেট ১০০ থেকে ১৫০ ইউরোতে বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।