মহালয়া থেকে ক্ষণগণনার অপেক্ষা ফুরালো। বেলতলায় চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হলো দুর্গাষষ্ঠীর। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার।
এর আগে এবার পঞ্চমী তিথির সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণত ষষ্ঠী তিথির সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার বোধন হয়। তবে পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী কিছু বছর ষষ্ঠী তিথি সন্ধ্যায় শুরু হচ্ছে না বা পরের দিন যথেষ্ট সময় নেই। শাস্ত্র অনুযায়ী, যদি ষষ্ঠীর সন্ধিকাল পাওয়া না যায়, তবে পঞ্চমীর সন্ধ্যায়ই বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন করতে হয়। এ বছর তিথির এ কারণে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পঞ্চমীর সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার বোধন করা হয়েছে।
বোধনের পর ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর অধিবাস। বেল তলায় দেবীর আরাধনা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে।
বেল গাছের নিচে কেন একদিন থাকবেন দুর্গা
অকাল বোধনের পর রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনার প্রস্তুতি নিলেন। সেই সময় ধ্যানে বসে ব্রহ্মা দেখলেন বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনি দেবী।
তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পূজা হবে ওই বেল গাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বেল গাছের পূজা করে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গামণ্ডপের সামনে থাকা বেলতলায় শুরু হয় কল্পারম্ভ বিহিত পূজা। ঘণ্টা, কাঁসর, শঙ্খ, ঢাক ও ঢোলের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। এছাড়া সারাদেশে একই সময় মেনে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন সকাল থেকেই, তবে সংখ্যায় কম। পূজামণ্ডপে উলু ধ্বনির সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেন তারা। সকালের আনুষ্ঠানিকতার পর সন্ধ্যায় খুলে দেওয়া হবে মূল মণ্ডপ। হবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। এদিকে পূজাকে কেন্দ্র করে মন্দির ও আশপাশের এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বোধন শেষে রোববার থেকে মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠীবিহিত পূজা, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুর্গাপূজার। সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং বুধবার মহানবমী শেষে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, এবার জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন); যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
দুর্গোৎসব মূলত পাঁচ দিনের হলেও এর শেষ হয় কোজাগরি লক্ষ্মীপূজায় গিয়ে। এর রেশ থাকে শ্যামাপূজা পর্যন্ত। টানা এই লম্বা সময় নানা আনন্দ, উপাচারে মেতে থাকেন সনাতনীরা।
রাজধানীতে এবার মোট ২৫৯টি মন্দির-মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় সাতটি বেশি। এছাড়া সারাদেশে মোট মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার মণ্ডপের বেশি।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ঢাকাসহ সারাদেশের দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৩০ প্লাটুন সদস্য।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দুর্গাপূজায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হলে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

















