রাজনৈতিক নিয়োগ ও আমলাতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে আছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর, সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়াই মূল কাজ।
সোমবার দুদক সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে কমিশন প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকে একদিকে চলে রাজনৈতিক প্রভাব, অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক প্রভাব। এই দুই প্রভাবের কারণে সংস্থাটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। তাই দুদককে আপাদমস্তক ঢেলে সাজাতে হবে। পাশাপাশি যেসব বিতর্কিত আইন আছে তা বাতিল ও সংস্কার করা হবে।
অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর,ই দেশের বড় বড় দূর্ণীতিবাজদের নাম সামনে আসছে। দুদক ওই সব দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নানা কর্মকান্ডও শুরু করেছে। প্রশ্ন হলো এসব দূর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সম্পর্কে কি দুদক জানতো না! দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, দুর্নীতিবাজদের তালিকা দুদকের কাছে আগেই ছিলো, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি৷ এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ শুরু করেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের কমিশনার ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুদকের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রেষণে আসে। এতে দুদকের অন্য কর্মীরা কাজ করতে পারেন না।
এ সভায় কমিশনের দায়িত্ব, এখতিয়ার, কর্মপরিধি বোঝার চেষ্টা করেছেন বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুদকের যে এখতিয়ার, তার দুটি আঙ্গিক হচ্ছে প্রতিকার ও প্রতিরোধ। যাঁরা দুর্নীতি করেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা ও বিচার করা। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি যাতে না হয়, তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দুটি বিষয় বিবেচনায় রেখে তাঁরা সংস্কারের জন্য কাজ করবেন।
দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুদকের কাজে বাধা তৈরি করে, এমন আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করা। শুধু আইনি সংস্কার দিয়ে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সেটি ভাবা ঠিক নয়। সার্বিকভাবে শাসনপদ্ধতির পাশাপাশি একধরনের মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে যে দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায়। সেটা কীভাবে প্রতিহত করা যায়, সে জন্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন তাঁরা।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্য সুপারিশ তৈরির কাজ শেষ করে আগামী বছর ৭ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এখানে সকল পক্ষ এবং অভিজ্ঞদের মতামত নেয়া হবে৷ আদর্শ দুদক করতে হলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও বিষয়টি বুঝতে হবে বলে মনে করেন কমিশন প্রধান।
সংস্কারের পর রাজনৈতিক সরকার চাইলে দুদকে নিজেদের লোক বসাতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলীয় প্রভাবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তাঁরা সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন তারা।
দুদক সংস্কার কমিশনের বৈঠকে কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত হন কমিটির সদস্য ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোস্তাক খান।














The Custom Facebook Feed plugin