শুক্রবার , ১ এপ্রিল ২০২২ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

বাঘ সংরক্ষণ শিখতে বিদেশ যাবেন ২০ কর্মকর্তা

প্রতিবেদক

এপ্রিল ১, ২০২২ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

আগামী অক্টোবরে সুন্দরবনে বাঘশুমারি শুরু হতে যাচ্ছে। এবারও ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে এই বাঘশুমারি হবে। ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর আওতায় এই শুমারিতে ব্যয় হবে প্রায় ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো ও সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বনের চারটি রেঞ্জের ৪০ ভাগ এলাকা জরিপের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে যেভাবে এবং যে এলাকাগুলোতে বাঘশুমারি করা হয়েছিল, চলতি বছর একই পদ্ধতিতে বাঘশুমারি করা হবে। কারণ আগের শুমারির সঙ্গে তুলনা করতে গেলে একই এলাকায় শুমারি করা প্রয়োজন। সুন্দরবনের ৩টি ব্লকে শুমারি হবে। মাঠ পর্যায়ে শুমারির কাজে সময় লাগবে প্রায় ৪ মাস।

বাঘ ধরে ধরে স্যাটেলাইট ডিভাইস লাগানোর সময় যেন কোনো বাঘ কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা হবে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

এদিকে, ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ আওতায় বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে অভিজ্ঞতা অর্জনে ২০ জন সরকারি কর্মকর্তা শিক্ষা সফরে যাবেন। এর জন্য সম্ভাব্য দেশ হিসেবে তারা ভারত বা নেপালকে বিশেষ বিবেচনায় নেবেন।

তবে ২০ জন কর্মকর্তার বিদেশ যেতে কত টাকা খরচ হবে জানতে চাওয়া হলে কর্মকর্তারা এর উত্তর দেননি।

তারা জানান, গত ২৩ মার্চ “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প” শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।

এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে বাঘ গননা, বাঘ গননার জন্য আবাসন লঞ্চ ও সাপোর্ট বোট ৪ মাসের জন্য ভাড়া করা, ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জন্য ২০০টি বিশেষ ক্যাটাগরির ক্যামেরা সংগ্রহ, ব্যাটারি, এসডি কার্ড ক্রয়, জরিপ দলে অনিয়মিত শ্রমিক, ট্রলার চালক ও জরিপের সকল কার্যক্রম পরামর্শক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরিচালনা, জরিপ দলের সকল সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান, উপাত্ত সংগ্রহ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের বাকি টাকা বন সংরক্ষণে ব্যয় হবে বলে জানান তারা। এর মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও ৪টি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান, তাদের পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভার আয়োজন করা হবে।

এছাড়া বাঘের শিকার প্রাণি হরিণ, বন্য শুকর ইত্যাদি প্রাণির জরিপ, সুন্দরবনের বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবির সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ ইত্যাদি কার্যক্রম এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনে প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায়, আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রমও এ প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে।

সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। এজন্য ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের ফেন্সিং নির্মাণ করে বাঘমানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে ২০ জনের শিক্ষা সফর ও ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, সুন্দরবনে ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সমস্ত এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি ঘূর্ণিঝড়ের সময় যাতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

এছাড়া, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সকল কার্যক্রমে পরামর্শক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ, জরিপ কার্যাদি সম্পন্ন, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্প মেয়াদি ১২ জন পরামর্শক বিশেষজ্ঞের সংস্থান প্রকল্পে রাখা হয়েছে।

এছাড়া, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সকল জরিপ ও গবেষণার কার্যক্রম প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।

বন বিভাগের মতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। তার মধ্যে ২০১৮ সালের জরিপ অনুয়ায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা আছে ১১৪ টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বাঘের ৭৮ শতাংশ খাবার হরিণ । ২০২৪ সাল থেকে তাই বাঘ ও শুকরের সার্ভে করা হবে।

সংবাদ সম্মেলন করেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো ও সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন, নির্মল কুমার পাল, ডিএফও ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট নেশার কনজারভেশন ডিভিশন উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক