দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই-যুদ্ধের রক্তগঙ্গা পেরিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি পায় একটি স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। এদিন দুঃশাসন, অত্যচার, নির্যাতনের যাতাকল পেড়িয়ে বাংলার পূব আকাশে ওঠে বিজয়ের আলো। যে আলো স্বাধীনতা হয়ে প্রবেশ করে বাংলার প্রতিটি ঘর ও আঙিনায়। বাঙালি আজ ৫৪তম বিজয়োৎসবে মত্ত।
রোববার দিবাগত রাত থেকেই বর্ণিল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদর দপ্তর-কার্যালয় সাজানো হয়েছে নানা রঙে। সেজেছে দেশের ছোট-বড় শহরগুলোও।
আজ জাতির জন্য চিরগৌরবময় অবিস্মরণীয় এক দিন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ও পৃথিবীর মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আলোকোজ্জ্বল দিন আজ।
তবে একই সঙ্গে দিনটি গভীর বেদনারও। দেশ-জাতিকে পরাধীনতার নিগড়মুক্ত করতে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা। অগণিত মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। জানমালের ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। কৃতজ্ঞ জাতি আজ এই বিজয়ের আনন্দের দিনে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে আত্মদানকারী সেই শহীদদের। স্মরণ করবে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
আজ রাজধানীসহ সারা দেশের সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার, জাতীয় পতাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করবে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পতাকা ও ফুল হাতে নামবে অগণিত মানুষের ঢাল।
বাসস জানায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁদের আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, আসুন ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেছেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।