বিচার বিভাগ দলীয়করণ করার কারণে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি অভিযোগ করেন, সারাদেশে একটা গণতন্ত্রহীন অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের (বিএনপির) ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এসব অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশে একটা ছদ্মবেশী একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্যই তারা একে একে সব স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। সবার আগে তারা হাত দিয়েছে বিচার বিভাগে।
তিনি বলেন, এই বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে আজকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করে দেওয়া হয়েছে। দেশে মানুষ অন্তত তার প্রয়োজনের সময়, যখন নির্যাতিত হবে রাষ্ট্র দ্বারা, তখন বিচার বিভাগের কাছে গিয়ে একটু স্বস্তি আশা করে। দুর্ভাগ্যের কথা আজকে সেই বিচার বিভাগকে তারা দলীয়করণ করে, নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে- বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যে রায়গুলো হয়, সেগুলো হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, অতি সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতির সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না, তার বিরুদ্ধেও দুদক একটা মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এটা অত্যন্ত বেআইনি কাজ। আমরা মনে করি এটা শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নয়, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
দেশের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বুকের ওপরে একটা সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা দখল করার পরে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে এবং জনগণকে একটা অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তিন বছর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের সঙ্গে ইফতার করেছেন। আজকে এই সরকারের নির্যাতনে-রোষানলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। এতে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আফরোজা আব্বাস, সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ, কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ছিলেন।
ইফতারপূর্ব অনুষ্ঠানে দলের গুম হওয়া নেতৃবৃন্দের পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন।