বিশ্ব আরও একটি মন্দা দেখবে কি না সে বিষয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে যখন অর্থনীতি গতিশীল হয় তখনই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে মেঘ নেমে আসার শঙ্কা দেখছেন কেউ কেউ। যদিও অধিকাংশ অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন চলতি বছরে মন্দা তুলনামূলকভাবে অসম্ভব।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনের করোনা নীতি, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি ২০২২ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ বাড়াবে।
এখন প্রশ্ন হলো এরকম খারাপ পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ভুল নীতি ধীর অর্থনীতিকে সংকোচনের দিকে নিয়ে যেতে পারে কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তারা সিনক্লেয়ার বলেন, মন্দার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন। এমনকি ভালো পূর্বাভাসকারীদের জন্যও। এর আগের বার মন্দা শুরু হওয়ার পরেই আমরা বুঝতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। দেশটিতে লাফিয়ে বাড়ছে ভোগ্য পণ্যের দাম। ফলে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশটিতে সংকট তৈরি হওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কমে যেতে পারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। করোনা মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি সংকোচিত হয় চার দশমিক তিন শতাংশ।
গত মাসে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ডুডলি এক মতামতে সতর্ক করে বলেন, একটি মন্দা এখন কার্যত অনিবার্য।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরেকটি সতর্কতা সংকেত হলো স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডগুলোর ওপর নতুন নিয়ম আরোপ করা। যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।
ক্যাম্পবেল আর হার্ভে নামের একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, ফেডের নীতির কারণে মন্দার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। যারা মনে করেন চলমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফেড ধীর গতিতে এগোচ্ছে তাদের সঙ্গেও একমত পোষণ করেন তিনি।
গত মাসে সিএনবিসির পক্ষ থেকে পরিচালিত একটি জরিপে ৮১ শতাংশ মার্কিন প্রাপ্তবয়স্করা জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন চলতি বছরে মন্দার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা বিশ্ব। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে বাইডেন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই পথে হাঁটছে। রাশিয়ারও সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেশকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানিতে প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী সংকট দেখা দিয়েছে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে করোনা মহামারি থামতে চীনের কঠোর নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। কারণ দেশটিতে এখনো লকডাউন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চীনা অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ কারস্টেন হোলজ বলেন, চীন এই বছরের জন্য যে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।
তবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে তা অনেকাংশেই ইতিবাচক।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানায় চলতি বছরে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। আগামী বছরে যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশে। যদিও এই হার গত বছরের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
হংকংয়ের নাটিক্সিসের এশিয়ার সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ট্রিন নগুয়েন বলেছেন, চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে মন্দা তৈরি হওয়া অসম্ভব।
সূত্র: আল-জাজিরা