মারপ্যাঁচে মূলত এই তেল চুরি হয়েছে। ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর ট্যাঙ্কের মজুত থেকে এই ডিজেল গায়েব হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে যমুনা অয়েল কোম্পানি।
বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডিপো থেকে পাইপলাইনে ফতুল্লার ডিপোতে তেল খালাস হয়। এই পথে এখন তেল চুরি সম্ভব নয়। ডিপোর ট্যাঙ্ক থেকে লরির মাধ্যমে তেল পাম্পে পাঠানো হয়। এখানেই তেল চুরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো কোম্পানির অপারেশন বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনের মাধ্যমে ২৪ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহ কর হয়। এই চালানে দুই লাখ ৬২ হাজার লিটার তেল কম (ক্ষতি) হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ডিজেল আসে। এবার ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার লিটার ডিজেল। এই ক্ষতির আড়ালেই থাকতে পারে রহস্য।
ট্যাঙ্কের মজুত সক্ষমতা সনদে জালিয়াতি
সূত্র মতে, জ্বালানি তেল চুরির অন্যতম উপায় হলো ট্যাঙ্কের মজুত সক্ষমতা কমিয়ে দেখানো। মূলত সক্ষমতা সনদে জালিয়াতি করে মজুত ক্ষমতা কম দেখানো হয়েছে। আসলে বাড়তি তেল ট্যাঙ্কের ভেতরেই ছিল। এই বাড়তি তেল ধাপে ধাপে বাইরে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া জ্বালানি তেল পরিমাপ করা হয় সনাতন পদ্ধতিতে। একটি রড দিয়ে ট্যাঙ্কের গভীরতা মাপা হয়। এ গভীরতা দুই মিলিমিটার কম দেখাতে পারলেই এক হাজার ১৮০ লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করা যায়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক কর্মকর্তা জানান, ট্যাঙ্কের সক্ষমতা যাচাইয়ে কোনোভাবেই ত্রুটি ১ শতাংশের বেশি হতে পারে না। ১ শতাংশ ত্রুটি হলে মজুতের হিসাবে সাত হাজার লিটার তেল কম-বেশি হবে। কিন্তু একটি ট্যাঙ্কের (২২ নম্বর) দুবারের সক্ষমতা যাচাইয়ের সনদে মজুত সক্ষমতায় ৬০ হাজার লিটারের পার্থক্য হয়েছে।
ফতুল্লা ডিপোর ট্যাঙ্ক দুটির মজুত সক্ষমতা যাচাই করেছে খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এম নুরুল হক। ২২ নম্বর ট্যাঙ্কের সক্ষমতা ২০১৮ সালে ও ২০২৫ সালে যাচাই করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ নম্বর ট্যাঙ্কের ধারণক্ষমতা ছিল ৭২ লাখ ৬৬ হাজার লিটার। চলতি বছরের সনদে মজুত ক্ষমতা দেখানো হয় ৭২ লাখ আট হাজার লিটার। অর্থাৎ মজুত ক্ষমতা কমে গেছে ৫৮ হাজার লিটার। ২৩ নম্বর ট্যাঙ্ক নতুন। এবারই প্রথম এটির সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য যমুনা অয়েল কোম্পানির এজিএম (ইঅ্যান্ডডি) আলমগীর আলম বলেন, তারা ডিপো এলাকা পরিদর্শন করছেন। সব কিছু যাচাই করছেন। আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেবেন। যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরত-ই-ইলাহীকে ফোন করা হয়, এসএমএস দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

















