ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধ করে থাকলে তাকে প্রত্যর্পণ করা উচিত, এমন মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড সামিটে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ওই অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত বলে মনে করেন কি-না জানতে চাওয়া হলে ড. ইউনূস পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, কেন উচিত হবে না? এরপর বলেন, তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং বিচারের সম্মুখীন করা উচিত। আপনি তো বিচারের পক্ষে কথা বলছেন, তাহলে উনারও তো বিচারের সম্মুখীন হওয়া উচিত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। পরে ছাত্র-জনতা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষমতা গ্রহণের আমন্ত্রণ জানায় এবং তিনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তিনি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
নির্বাচনে অংশ নেবেন না ড. ইউনূস
‘ক্লাইমেট-ফরোয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সঞ্চালক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমাকে দেখে কি আপনার মনে হয় আমি নির্বাচন করব? আমি নির্বাচন করব না।
সঞ্চালক তখন তাকে আবারও প্রশ্নের ধরনে বলেন, তাহলে আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনাই নেই? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, না, না কোনোভাবেই নয়।
নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাবেক সরকার দেশের বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ সব ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এসব ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তাদের পরামর্শ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর সবাই যখন একটি ঐকমত্যে পৌঁছাবে, তখনই নির্বাচন আয়োজন করা হবে। আর এই কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যেই করা হবে।
অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা করা, যার মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং ব্যাপক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তা এই গ্রহ ধ্বংসের মূল চাবিকাঠি। মানুষ একটি আত্ম-ধ্বংসাত্মক সভ্যতা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর করা জলবায়ু ক্ষতির বোঝা বহন করা উচিত না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর যেসব ধ্বংসের ভার চাপিয়েছেন, তার ভার কেন আমরা বহন করব? কম বর্জ্য উৎপাদন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর দায়িত্ব ধনী দেশগুলোরই বহন করা উচিত।