রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় চাঁদপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ঘনিষ্ঠজন একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীকে শিক্ষার্থীরা আটক করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। পুলিশের কাছে সোপর্দের একদিন পরই আর্থিক সমঝোতায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে ধানমন্ডি ৯/এ এর ১৩৮ নম্বর বাসা থেকে তাকে আটক করে ধানমন্ডি থানায় দিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। থানা পুলিশ তাকে আর্থিক সমঝোতা করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আজকে (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি ৯/এ রোডের ১৩৮ নম্বর বাড়িতে ‘ল্যান্ড ক্রুজার’ ব্রান্ডের কয়েক কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি রাতের আঁধারে এক লোক লুকিয়ে রেখে গেছে। রেখে যাওয়ার সময় গাড়িতে থাকা নম্বর প্লেট খুলে নিয়ে গেছে। এমন খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা বাড়িটি ঘেরাও করে। এ সময় গাড়িটির মালিক দাবি করেন শুক্কুর হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আসেন। ওই সময় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংসদ মোফাজ্জল হোসেন মায়ার একান্ত সহকারী পরিচয় দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে। পরবর্তীতে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, মূলত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাড়ীটি জামালপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের। যিনি শেখ সেলিমের বায়রা।
অবৈধভাবে কোটি টাকা মূল্যের এ গাড়ীটি তাড়াহুড়া করে একটি চুক্তিনামার কাগজ বানিয়ে আনেন মায়ার একান্ত সহকারী শুক্কুর হাওলাদার। সে সময় শিক্ষার্থীরা জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর মাধ্যমে সহায়তা চাইলে ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক মাহফুজ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ এসে শুক্কুর হাওলাদার ও গ্যারেজের মালিকের সাথে দফায় দফায় সমঝোতায় কথা বলতে দেখা যায়। দীর্ঘ আট ঘণ্টা নানা তালবাহানা শেষে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে গাড়ির কাগজপত্র এবং গাড়ির চাবি জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় শুক্কুর হাওলাদার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদেরকে শিক্ষার্থীদের নানা তথ্য সরবরাহ ও সাইন্সল্যাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দিয়ে থানায় সোপর্দ করে আসে।
কিন্তু, লিখিত অভিযোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে পরদিন আর্থিক সমঝোতা করে আটক শুক্কুর হাওলাদারকে ছেড়ে দেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
এ ঘটনার বিষয়ে আজ (শুক্রবার) শিক্ষার্থীরা খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে, আটক করে থানায় বুঝিয়ে দিয়ে আসা শুক্কুর হাওলাদারকে পরদিনই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তাকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিকাইল বিন মাসুম জানান, আমরা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাড়ীটি আটক করতে গেলে শুক্কুর হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি গাড়ির মালিক দাবি করে। পরবর্তীতে সে তার স্যার কিনেছে বলে জানায়। একেক সময় একেক রকম তথ্য দেওয়ায় আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন সে নিজেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মায়ার একান্ত সহযোগী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ফেইসবুক থেকে ছবি বের করে আমাদের দেখায়। সে সময় সে মোবাইলে এমপি মন্ত্রীদের সাথে ছবি দেখাতে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলে আমরা দেখতে পাই সে বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা অনেক শিক্ষার্থীর ছবি পাঠিয়ে রেখেছে এবং শিক্ষার্থীদের তুলে নিতে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে।
এসব বিষয় নিয়ে আমরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসার পরও পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। নিশ্চয়ই পুলিশের সাথে তারা আর্থিক সমঝোতায় যাওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। না হয় এত গুরুতর অভিযোগের পরও তাকে কীভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ওইদিন রাতে শিক্ষার্থীরা শুক্কুর হাওলাদারকে আটকের পর আমরা থানায় নিয়ে আসি। ওই সময় শিক্ষার্থীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগ আমরা তদন্ত করব বলে তাদের আশ্বস্ত করি।
শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে আপনাদের কাছে সোপর্দ করে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও অভিযুক্ত ব্যক্তি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তাকে সেফ কাস্টডিতে দিয়েছে৷ তার বিষয়ে দেওয়া অভিযোগ আমরা তদন্ত করছি। তবে, আর্থিক সমঝোতার বিষয়টি ভিত্তিহীন।