বলিউডের ‘ভাইজান’ খ্যাত মেগাতারকা সালমান খানের ব্যক্তিজীবন যেন সিনেমাকেও হার মানায়। ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের কারণে তাকে চলাফেরা করতে হয় বিশেষ সশস্ত্র বডিগার্ড নিয়ে। বেশ কয়েকবারই সালমান খানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিলো। এরমধ্যে সবশেষ হুমকি এসেছিলো লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং থেকে।
তবে, সম্প্রতি মুম্বাইয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসে এই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। অবশেষে, মুম্বাইয়ের পুলিশ জানালো সালমান খানকে হত্যার হুমকি, নিছক হুমকি ছিলো না। বলিউড তারকাকে হত্যা করতে ২৫ লাখ রুপিতে ভাড়া হয়েছিলো খুনিকে।
বুধবার, নভি মুম্বাই পুলিশের দায়ের করা এক অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ বলছে, কারাগারে থাকা গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল এই কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলো। সব মিলিয়ে পাঁচ কিলারের একটি দলকে হত্যা মিশনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিলো।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের পানভেলে সালমান খানের বাগানবাড়ির কাছে বলিউড তারকাকে হত্যার সিদ্ধান্ত ছিলো। এই মিশনে ব্যবহারের জন্য পাকিস্তান থেকে অত্যাধুনিক একে ৪৭, একে ৯২ ও এম ১৬ রাইফেল কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়াও তুরস্কের তৈরি জিগানো অস্ত্রও কেনার কথা ছিলো।
তুরস্কের এই বিশেষ রাইফেল দিয়েই পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যা করা হয়েছিল। অভিযুক্তরা সালমান খানকে হত্যা করার জন্য ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেদের ভাড়া করেছিল, যাদের সবাই পুনে, রায়গড়, নভি মুম্বাই, থানে এবং গুজরাটের বিভিন্ন অবস্থানে লুকিয়ে আছে।
প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন লোক সালমান খানের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলেন, বিশেষ করে তার বান্দ্রার বাড়ি, পানভেল ফার্মহাউস এবং গোরে গাঁও ফিল্ম সিটিতে। সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনা ২০২৩ সালের এপ্রিল আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কোন এক সময়ের মধ্যে করা হয়েছিলো।
পুলিশের তদন্ত বেরিয়ে এসেছে, সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বৃহস্পতিবার হরিয়ানার পানিপথ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সুখা। তিনিই সার্প শ্যুটার অজয় কাশ্যপ ওরফে একে এবং আরও চারজনের সঙ্গে হত্যার চুক্তি করেছিলো। এই পাঁচজনের সঙ্গে বসে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সুখা।
কাশ্যপ ও তার দল এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, অভিনেতার কঠোর নিরাপত্তা এবং বুলেটপ্রুফ যানবাহনের কারণে হত্যাকাণ্ডটি চালানোর জন্য উচ্চমানের অস্ত্রের প্রয়োজন হবে। তখন সুখা তাদেরকে অস্ত্র দেওয়ার কথা জানায় এবং কাশ্যপের চাহিদা অনুযায়ী পাকিস্তানের অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সুখা ভিডিও কলের মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক অস্ত্র ব্যবসায়ী ডোগারের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। অস্ত্র চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করার সময় একে-৪৭ এবং অন্যান্য উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো একটি শালের মধ্যে মোড়ানো অবস্থায় ছিলো। পঞ্চাশ শতাংশ অগ্রিমের শর্তে অস্ত্র বিক্রিতে রাজি হয় ডোগার।
পুলিশ আরও জানতে পারে, সব ভাড়াটে খুনিরা কানাডাভিত্তিক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার ও লরেন্স বিষ্ণৌইয়ের ভাই আনমোলের কাছ থেকে চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলো। ৫৮ বছরের সালমানকে হত্যার পর দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারীতে জড়ো হয়ে সেখান থেকে সমুদ্রপথে শ্রীলঙ্কায় চলে যাবার কথা ছিলো পাঁচ খুনির।
প্রসঙ্গত, বলিউড অভিনেতা সালমান খানের বান্দ্রার বাড়ির বাইরে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের শুটার সুখাকে হরিয়ানার পানিপথ থেকে গ্রেপ্তার করেছে নভি মুম্বাই পুলিশ। এর আগে, এপ্রিলে মুম্বাইয়ে সালমানের বান্দ্রার বাসভবনের বাইরে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিলো।
মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি হত্যায় গ্রেফতার দুজন নিজেদের মুম্বাইয়ের লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য বলে দাবি করেছেন। হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে গ্যাংটি। এরপর থেকে নড়েচড়ে বসে বলিউডসহ ভারত প্রশাসন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলিউড ভাইজানের বাড়ির চারপাশ ঘিরে।q