বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমার অভ্যন্তরে আবারও গোলাগুলি চলছে। সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুসহ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের কানে এসেছে এসব গোলাগুলির শব্দ।
সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ২টায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর বিকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্তের ১৮, ৩১, ৩৪ ও ৩৫, সদর ইউনিয়নের আশারতলী, ফুলতলী ও জামছড়ির ৪৫ ও ৪৬ নং পিলার কাছাকাছি মিয়ানমার অভ্যন্তরে হেলিকপ্টার থেকে কিছুক্ষণ পর পর গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। একইভাবে গোলাগুলি হয়েছে টেকনাফের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমার অভ্যন্তরেও। বিকট শব্দে রাতে ও সকালে ঘুম ভেঙেছে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিদের। ভয়ে অনেকেই ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদেও যাননি।
তারা আরও জানান, অন্তত ১৫ দিন পর সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রুর মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি শব্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া টেকনাফ সীমান্তেও গুলির শব্দ পায় সীমান্তের বসবাসকারীরা। এসব সীমান্তে অনেক সময় রাতে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রথমে আকাশে ড্রোনের দেখা মেলে। এর কিছুক্ষণ পরপরই গোলার শব্দ হয়।
তুমব্রুর স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন (৫০) বলেন, ভোরে ওপারের বিস্ফোরণের শব্দে এপারের শিশুদের ঘুম ভেঙেছে। এতই বিস্ফোরণ হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প চলেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলম বলেন, রাতে তো গোলাগুলি হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মোট তিন দফা মিয়ানমার হেলিকপ্টার থেকে মর্টারশেল ফেলার শব্দ শোনা গেছে। অনবরত গোলাগুলির আওয়াজও এসেছে।
তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী সরোয়ার বলেন, পরিবার পরিজন ও পাড়া-প্রতিবেশী সবাই চিন্তা করছেন। মিয়ানমার সীমান্তে যা দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গোলাগুলির শব্দ কয়েকদিন বন্ধ ছিল। কাল থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক বেড়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. সৈয়দ বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় মিয়ানমারের গুলির শব্দ প্রায় সময় শোনা যায়। নাফনদের ওপারে আকাশে এখন যুদ্ধবিমান-ড্রোন দেখা যায়। প্রথমে ড্রোন উড়ে। এরপর গোলায় শব্দ শুনতে পাই। এ পরিস্থিতিতে রাত হলে মানুষের মাঝে ভয় সৃষ্টি হয়।
শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের আতঙ্ক কখন শেষ হবে বলা মুশকিল। মিয়ানমার সীমান্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় আমরা খুব ভয়ে থাকি। কারণ প্রায় সময় গোলাগুলিসহ আকাশে যুদ্ধবিমান দেখা যায়। গত সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া গোলাগুলি মঙ্গলবার ভোরে বন্ধ হয়। মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তের ফের গোলাগুলি শুরু হওয়ায় এখানকার রোহিঙ্গারা আতঙ্কে আছেন। এ ছাড়া সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইনের ভয়ও আছে।
সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ওপারে প্রায় সময় গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তবে আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে আছি। সম্প্রতি ওপারের সীমান্তে রাতে বিমান-ড্রোনও দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পাশাপাশি সীমান্তে ৩০০ মিটারের ভেতরে যেসব বসবাসকারীরা রয়েছে, তাদের আমরা খোঁজখবর রাখছি।’
নাম না প্রকাশের শর্তে বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তজুড়ে টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারিত রয়েছে কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবি।
টেকনাফ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সীমান্তে গোলাগুলির খবর জেনেছি। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের ৩০০ মিটারের ভেতরে সব বসবাসকারীদের খোঁজ রাখা হচ্ছে।